মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তানে ‘কনে অপহরণের’ নামে এক তরুণীকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে সেই অপহরণের ভিডিওচিত্র।

গত সোমবার অপহৃত হন আইজাদা কানাতবেকোভা (২৭) নামের ওই তরুণী। অপহরণকারী ছিলেন তিনজন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, তিন অপহরণকারী একটি গাড়ি থেকে নেমে জোর করে আইজাদাকে তুলে নিয়েছেন।

আইজাদার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তিন অপহরণকারীর একজন ইতিপূর্বে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু আইজাদা রাজি হননি। তার পরিবারের সদস্যরা ওই ব্যক্তিকে আইজাদার কাছ থেকে দূরে থাকতে বলেছিলেন।

বুধবার রাজধানী বিশকেকের বাইরে একটি মাঠে আইজাদা ও তার মূল অপহরণকারীর মৃতদেহ পাশাপাশি পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় এক মেষপালক প্রথম ওই মৃতদেহ দুটি দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।

অপহরণকারীর দেহে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশের ধারণা আইজাদাকে হত্যার পর ছুরির ঘায়ে আত্মহত্যা করেছে ওই ব্যাক্তি।

এদিকে মর্মান্তিক এই ঘটনায় কিরগিজস্তানজুড়ে অসন্তোষ ও বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশকেকে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দফতরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন পাঁচ শতাধিক বিক্ষোভকারী। এ সময় তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেন।

তাদের অভিযোগ, গোটা অপহরণকাণ্ডের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলেও পুলিশ সেই গাড়িটি আটক ও অপহরণকারীদের গ্রেফতারে গাফিলতি করেছে।

কিরগিজস্তানে কনে ‘অপহরণ’ করে বিয়ের রীতি প্রচলিত আছে। অনেকেই এই রীতিকে দেশটির প্রাচীন প্রথা হিসেবে দেখতে চাইলেও সেখানকার কোনো কেনো সমাজবিজ্ঞানী এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।

দেশটিতে পুরুষরা একটি নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছানোর পর বিয়ে করার জন্য তাদের ব্যাপক চাপ দেন পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়রা। এ কারণে কিরগিজস্তানের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ ‘সহজে ও স্বল্প খরচে’ বিয়ের জন্য ‘কনে অপহরণ’ করেন বলে মনে করেন অনেক সমাজবিজ্ঞানী।

২০০৩ সালে অবশ্য আইন করে এই প্রথা নিষিদ্ধ করেছে কিরগিজ সরকার। কিন্তু জাতিসংঘের জরিপ বলছে, এখনও দেশটিতে প্রতি পাঁচটি বিয়ের একটি হয় কনে অপহরণ রীতিতে।

বৃহস্পতিবার বিক্ষোভে অংশ নেওয়া স্থানীয় সাংবাদিক মাহিনূর নিয়াজোভা বার্তাসংস্থা এফপিকে বলেন, ‘দেশে প্রথা পালনের নামে নারীদের ওপর যেভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন বাড়ছে, তাতে চুপচাপ বসে থাকা সম্ভব নয়।’

কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্ট সাদইয়ার জাপারভ অবশ্য এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। অপরাধীদের শাস্তিবিধান ও এই প্রথা সম্পূর্ণ রদ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আইজাদার মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, গোটা দেশের জন্যই শোকাবহ; এবং আমি বলতে চাই, এটি যেন দেশের ইতিহাসে সর্বশেষ কনে অপহরণের ঘটনা হয়, সেই ব্যবস্থা সরকার নেবে।’

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ