মহামারি করোনা প্রত্যেকের জীবনকে মারাত্মক এক কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়েছে। অতিসংক্রামক এই ভাইরাসের কারণে মানুষে মানুষে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হচ্ছে। এতে যার এই মুহূর্তে সহযোগিতা প্রয়োজন তার কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু করোনায় বিপর্যস্ত ব্রাজিলের নার্সরা নির্জনবাসে থাকা কোভিড রোগীদের জন্য মহৎ এক উদ্যোগ নিয়েছেন।

ব্রাজিলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। গত মঙ্গলবার একদিনে করোনায় প্রাণহানি হয়েছে চার হাজারের বেশি মানুষের। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়া একাকী মানুষকে মানবীয় স্পর্শ দিতে বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করছেন নার্সরা। মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের হাতে মানবীয় শেষ স্পর্শের অনুভূতি দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।

একবার ব্যবহারযোগ্য গ্লাভস ব্যবহার করে এই ‘মানবীয় স্পর্শ’ দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে এ রকম দু’টি গ্লাভসে হালকা গরম পানি ভরানো হয়। তারপর পানিভর্তি গ্লাভস দু’টির একটি দেওয়া হয় রোগীর হাতের ওপরে; অপরটি তার হাতের নিচে। এর একটাই কারণ, এটার স্পর্শ পেয়ে রোগীর মনে হবে যেন তার কোন পরমাত্মীয় গভীর মমতায় হাতটি ধরে রেখেছেন।

মর্মস্পর্শী এমন একটি ছবি টুইটারে শেয়ার করেছেন গালফ নিউজের মতামত সম্পাদক সাদিক সামীর। ক্যাপশনে তিনি একে ‘বিধাতার হাত’ উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘ব্রাজিলের একটি হাসপাতালের কোভিড আইসোলেশন ওয়ার্ডে সঙ্গনিরোধ অবস্থায় থাকা রোগীদের একটু মানসিক শান্তি ও সাহস জোগাতে নার্সদের ঐকান্তিক চেষ্টা। সম্মুখসারির যোদ্ধাদের স্যালুট।’

হাজার হাজার মানুষ গালফ নিউজের সাদিক সামীরের ওই টুইটটি লাইক করেছেন এবং শেয়ার করেছেন। প্রায় সবাই একমত হয়েছেন যে বর্তমান এই বৈশ্বিক সংকটকালে এ রকম ছবি খুবই মর্মস্পর্শী।

করোনায় ব্রাজিলের অবস্থা বিপর্যস্ত। এ সপ্তাহে একদিনে ৪ হাজার ১৯৫ জনের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেছে দেশটি। গত মঙ্গলবার লাতিন আমেরিকার সর্ববৃহৎ দেশটিতে চার হাজারের মানুষের মৃত্যু নিয়ে মোট প্রাণহানি ৩ লাখ ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে।  

দেশের ভয়াবহ এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বোলসোনারো বলছেন, ‘দেশজুড়ে কোনোভাবে লকডাউন জারি করা হবে না। মানুষকে ঘরে রাখতে আমাদের সেনারা রাস্তায় নামবে না। কারণ স্বাধীনতা বড় অমূল্য।’ 

অবশ্য গত বছরের জুলাইয়ে তিনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জানতাম, আমি এটাতে সংক্রমিত হবো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রত্যেকের তা হতে পারে। তাহলে ভয় কীসের? সবাই মিলে মোকাবিলা করব।’  

এএস