করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা কোভিশিল্ড নেওয়ার পর ভারতে ৩২০ জনের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ও প্ল্যাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। টিকা নেওয়ার পর ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যেও একই ধরনের কিছু ঘটনা নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তখন ভারত প্রথমবারের মতো এই তথ্য জানাল। 

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ তামিলনাড়ুর ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. গগনদ্বীপ ক্যাং রোববার দেশটির সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি যখন ৩২০টি ঘটনা ঘটতে পারে বলছি; তখন আমি এটাও বলছি যে, আমাদের ঝুঁকি ঠিক যুক্তরাজ্যের মতোই। আমাদের ঝুঁকি কম হলে এটা ঘটত না।

এ ধরনের ঘটনা মূল্যায়নের জন্য বেশ কিছু ভিত্তি থাকতে পারে জানিয়ে ডা. গগনদ্বীপ ক্যাং বলেন, রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনা খু্বই সাধারণ। কারো যদি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়, তাহলে এর কারণ রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া হতে পারে। আপনি যদি ১০ লাখ মানুষকে টিকা দেন এবং তাদের এক মাসের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখেন; তাহলে তাদের মধ্যে অনেকের রক্ত জমাট বাঁধা এবং স্ট্রোকের ঘটনা পাবেন।

ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. গগনদ্বীপ ক্যাং বলেন, রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনা মূল্যায়নের জন্য আমাদের কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করা দরকার। তখন ভ্যাকসিনের সঙ্গে রক্ত জমাটের সম্পর্ক আছে কি না তা তুলনা করা যাবে। 

ধরা যাক, টিকা নেওয়া ছাড়াই মাসে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে এক হাজার জনের রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটলো। তিনি বলেন, তারপর ১০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পর যদি এক হাজার জনের রক্ত জমাট বেঁধে যায়; তাহলে বিষয়টির তুলনা করা সহজ হবে। তাদের মধ্যে এক হাজারের পরিবর্তে যদি ১০ হাজার জনের রক্ত জমাট বাঁধে সেক্ষেত্রে এটি উদ্বেগজনক হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে শুধু রক্ত জমাটের দিকেই নজর রাখলে চলবে না। বরং রক্তে প্ল্যাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ার দিকেও নজর দিতে হবে।

রক্ত জমাটের সঙ্গে প্ল্যাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ার ঘটনা কি অস্বাভাবিক সমন্বয়? জবাবে গগনদ্বীপ ক্যাং বলেন, হ্যাঁ। রক্ত জমাটের সঙ্গে প্ল্যাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়া একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। রক্ত-জমাটরোধী ওষুধ হেপারিন দেওয়ার পরও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এটিও বিরল।  

আপনি যদি মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনা দেখেন, তাহলে এক মাস পর্যবেক্ষণে রাখা ১০ লাখ মানুষের মধ্যে কতজনের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটতে পারে? তিনি বলেন, একটি অথবা দু’টি ঘটনা দেখা যেতে পারে। কিন্তু এখন যদি নিয়ন্ত্রকরা বলেন যে, চার থেকে পাঁচটি ঘটনা ঘটছে তাহলে এটি প্রাথমিক মানদণ্ডের ওপরে। 

ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রকদের মতে, প্রতি এক লাখে অথবা আড়াই লাখে একজনের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা দেখা যেতে পারে।

সমাধান কী? ভেলোরের এই চিকিৎসক বলেন, লোকজনকে সতর্ক করে দিতে হবে— এই পরিস্থিতির সঙ্গে উপসর্গগুলোর ব্যাপারে সজাগ থাকার দরকার আছে। বিরল এই ঘটনা খুঁজে পাওয়া গেলে বোঝা যাবে, টিকা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা খুবই ভালো কাজ করছে। ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে আমরা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিগুলো সহজেই শনাক্ত করতে পারি। কারণ সেখানে ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষের মধ্যে একজনের এ ধরনের অভিজ্ঞতা হতে পারে। অন্যান্য দেশও একই ধরনের পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে পারে বলে জানান গগনদ্বীপ ক্যাং।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ৩০ বছরের নিচের জনগোষ্ঠীকে না দেওয়ার সুপারিশ করেছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। ব্রিটিশ এই কোম্পানির টিকা নেওয়ার পর ইউরোপের কয়েকটি দেশে ৩০ জনের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা তদন্ত করছে ওই অঞ্চলের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো।

এসএস