করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ রেমডিসিভির এবং এর উপাদান রফতানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। দেশটিতে রেকর্ড করোনা সংক্রমণের কারণে ওষুধটির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের সরকার শনিবার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। 

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল এই দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে রেমডিসিভিরের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে জনগণের মাস্ক পরতে অনীহা এবং সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষাকে দায়ী করছে কর্তৃপক্ষ।

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এখনো ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিচ্ছেন। দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা করছেন। এসব সমাবেশে অনেক মানুষকে মাস্ক ছাড়াই দেখা যায়; যেখানে সামাজিক দূরত্ব বিধিও মানা হচ্ছে না।

নতুন ধাক্কায় রোববার ভারতে রেকর্ড এক লাখ ৫২ হাজার ৮৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে করোনা শনাক্তের এই সংখ্যা টানা সপ্তম দিনের মতো আকাশচুম্বী।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলেছে, সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের বাইরের একটি হাসপাতালের পাশের ওষুধের দোকানের সামনে রেমডিসিভির কিনতে রোগীর স্বজনদের এক কিলোমিটারের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।

বিশ্বে ওষুধ শিল্পের জন্য ভারতের বেশ পরিচিতি রয়েছে। বর্তমানে মহামারি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রধান রফতানিকারক এই দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে টিকারও সংকট দেখা দিয়েছে। রেমডিসিভির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সরবরাহ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত রেমডিসিভির রফতানি বন্ধ থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের গিলিয়াড সায়েন্সের লাইসেন্সকৃত রেমডিসিভির ভারতের সাতটি কোম্পানি উৎপাদন করে। প্রত্যেক মাসে ভারতে অন্তত ৩৯ লাখ রেমডিসিভির তৈরি হয়। 

স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ভারত বিশ্বের শতাধিক দেশে এই ওষুধটি রফতানি করে। 

গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই ওষুধটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে এক বিবৃতিতে জানায়, রোগীদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি কিংবা মৃত্যু হ্রাসে এই ওষুধটির কার্যকারিতা সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এমন সতর্কবার্তা সত্ত্বেও ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ওষুধটির ব্যবহার অব্যাহত রাখে।

এসএস