করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে আরোপিত বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিষেধ শিথিল করেছে যুক্তরাজ্য। এর ফলে দেশটিত অপ্রয়োজনীয় দোকানপাট, সেলুন, পাবস এবং রেস্টুরেন্ট পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের লকডাউন শেষে ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- সোমবার থেকে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছে।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলেছে, সোমবার মধ্যরাতের পর থেকে ইংল্যান্ডজুড়ে বিভিন্ন ধরনের দোকানের সামনে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এমনকি সকালের দিকে দোকান, পাবস এবং রেস্টুরেন্টেও প্রচুর মানুষের ভিড় দেখা যায়।  

করোনা মহামারির কারণে আরোপিত আধুনিক শান্তিকালীন ইতিহাসের সবচেয়ে কঠোর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, পুনরায় সবকিছু খুলে দেওয়াটা ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য বড় ধরনের একটি পদক্ষেপ। করোনাভাইরাস এখনো হুমকি বিবেচনায় লোকজনকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনের বার্মিংহাম, অক্সফোর্ড স্ট্রিটের জেডি স্পোর্টেসের বাইরে প্রচুর লোক দেখা যায়। এছাড়াও বেক্সলিহিথের কেনটিস বেলে, সাউথ লন্ডন, সেন্ট্রাল ইংল্যান্ডের কোভেন্ট্রির ওক ইনেও অনেক মানুষকে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
লকডাউন শিথিলের পর লন্ডনে একটি দোকানের সামনে শত শত মানুষের ভিড়

নর্থ লন্ডনের একটি সেলুনের ম্যানেজার ম্যাগি গ্রিয়েভ বলেন, আমার গ্রাহকদের দেখতে পেয়ে আমি খুবই উত্তেজিত। তিনি বলেন, আজকের দিনটিকে প্রত্যেক সেলুনকর্মীর জন্মদিনের মতো মনে হচ্ছে। শুভাকাঙ্ক্ষীরা ইতোমধ্যে চলে এসেছেন। তারা ই-মেইল, মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে সেলুনে আসছেন। এমনকি দোকানের আশপাশের লোকজন শুভ কামনা জানাচ্ছেন। এটি দারুণ লাগছে। এখন পাবে যাওয়ার অপেক্ষা করতে পারছি না। 

তিন শতাব্দীর ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কোচনের মুখোমুখি হয়ে এক বছর পার করে আসা ব্রিটেনের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য জনগণের ব্যয়কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশটিতে গত বছরের জানুয়ারির শুরুর দিক থেকে শত শত ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন শনাক্ত হওয়ার পর ইংল্যান্ডে তৃতীয় বারের মতো লকডাউন জারি হলে সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়।

ব্রিটেনে পূর্ণ বয়স্কদের অর্ধেকের বেশি মানুষকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন এবং লকডাউনের মতো ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে দেশটিতে করোনায় মৃত্যু ৯৫ শতাংশের বেশি হ্রাস এবং সংক্রমণ ৯০ শতাংশের বেশি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান

ইংল্যেন্ডের অপ্রয়োজনীয় দোকানপাট, হেয়ারড্রেসার, সেলুন, পাব, রেস্টুরেন্ট এবং ব্যয়ামাগার পুনরায় খুলে দেওয়ায় নাগরিকদের দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

অপ্রয়োজনীয় দোকানপাট যেমন- হোম অ্যান্ড ফ্যাশন চেইন সোমবার থেকে ওয়েলস এবং ইংল্যান্ডে খুলে যাবে। তবে স্কটল্যান্ডে এসব প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য আগামী ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

কোভেন্ট্রির ওক ইনেও দোকানের সামনে অনেক মানুষকে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়

ইন্ডাস্ট্রি লবি গ্রুপ ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়ামের পরিসংখ্যান বলছে, তিনবারের লকডাউনে যুক্তরাজ্যজুড়ে বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট ২৭ বিলিয়ন পাউন্ড হারিয়েছে। এছাড়া গত বছর খুচরা দোকানের ৬৭ হাজার কর্মচারী তাদের চাকরি খুইয়েছেন। একই সময়ে দেশটির রিটেইল পার্ক, শপিং সেন্টার এবং হাই স্ট্রিট থেকে ১৭ হাজার ৫৩২টির বেশি চেইন স্টোর উধাও হয়ে গেছে।

এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে যেসব ব্যবসার মালিকরা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রেখেছেন, আমি নিশ্চিত এটি তাদের জন্য বিশাল পরিত্রাণের বিষয় হবে। আমি প্রত্যেককে দায়িত্বশীল আচরণ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। এরপরও মনে রাখবেন হাত, মুখ, ত্বক এবং নির্মল বায়ুই করোনাভাইরাসকে দমন করতে পারে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৭ মে থেকে লকডাউন শিথিলের পরবর্তী ধাপ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন। ওই সময়ে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ চালু হতে পারে বলেও প্রত্যাশা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারিতে যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত এক লাখ ২৭ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে; যা বিশ্বে পঞ্চম সর্বোচ্চ মৃত্যু। 

এসএস