নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন

ভিনধর্মে বিয়ে রুখতে ধর্মান্তকরণ প্রতিরোধী আইন নিয়ে ভারতের বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোর সাম্প্রতিক তৎপরতার সমালোচনা করেছেন ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন থেকে একটি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘এখন ‘ক্রিমিনাল অ্যাক্ট অব লাভ জিহাদ’ বলা হচ্ছে। তলিয়ে দেখলে বোঝা যায় ‘লাভ বা প্রেমের মধ্যে কোনও ‘জিহাদ’ নেই। ভিনধর্মের কাউকে ভালবেসে বিয়ে করলে, তার মধ্যে কোনও ‘জিহাদ’ থাকতে পারে না।’

‘তেমনই এক ধর্ম ছেড়ে অন্য ধর্ম গ্রহণ করলেও কোনও সমস্যা নেই। এটা একটা রাজনৈতিক দল করছে। এতে ভারতকে অপমান করা হচ্ছে। এটা ভারতের সংস্কৃতি নয়। আমার বিশ্বাস, আদালত এর জবাব দেবে।’ 

এটা খুবই চিন্তার বিষয়। এটাকে মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে। জীবন যাপনের অধিকার তো মৌলিক অধিকার হিসেব স্বীকৃত। কিন্তু এই আইনের ফলে মানবাধিকার লঙ্খন করা হচ্ছে

অমর্ত্য সেন

সম্প্রতি ’ধর্ম স্বতন্ত্র (রিলিজিয়াস ফ্রিডম) বিল ২০২০’ নামে একটি বিল পাস হয়েছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়। সেখানে বলা হয়েছে, বিয়ের নামে ধর্মান্তকরণ করা হলে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে অভিযুক্তকে।

এর আগে ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে উত্তরপ্রদেশে বিজেপিদলীয় যোগী আদিত্যনাথের সরকার ধর্মান্তকরণ প্রতিরোধী আইন পাস করে। ভারতে যা ‘লাভ জিহাদ’ আইন নামেও পরিচিতি পেয়েছে। 

ভিনধর্মে বিয়ের ক্ষেত্রে গোটা দেশে এই আইন কার্যকর করার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে ভারতের দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। যোগী আদিত্যনাথ নিজেও সরব ছিলেন এ প্রসঙ্গে।

যে কোনও মানুষই নিজের ধর্ম বদলে অন্য ধর্মগ্রহণ করতে পারেন। সেটা সংবিধান স্বীকৃত। তাই এই আইন অসাংবিধানিক

অমর্ত্য সেন

উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের পথ ধরে হরিয়ানার মনোহরলাল খাট্টার সরকারও কথিত ‘লাভ জিহাদ’ আইন কার্যকরে তৎপর। সেখানে ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নিয়ম নির্ধারণে বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

ওই সাক্ষাতকারে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘এটা খুবই চিন্তার বিষয়। এটাকে মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে। জীবন যাপনের অধিকার তো মৌলিক অধিকার হিসেব স্বীকৃত। কিন্তু এই আইনের ফলে মানবাধিকার লঙ্খন করা হচ্ছে। কারণ যে কোনও মানুষই নিজের ধর্ম বদলে অন্য ধর্মগ্রহণ করতে পারেন। সেটা সংবিধান স্বীকৃত। তাই এই আইন অসাংবিধানিক’।

এ বিষয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চাওয়া উচিত। আইনটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার জন্য মামলা করা উচিত সুপ্রিম কোর্টে।’

আমাদের সংবিধানে ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার কথা খুব স্পষ্ট ভাবে বলা আছে। ফলে এমন আইন সংবিধানকেই অপমান করে।

নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন

তিনি বলেন, ‘এটা খুবই বড় বিষয়। ভারতের ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত নেই। আকবরের সময় নিয়ম হয়েছিল, যে কোনও ব্যক্তি যে কোনও ধর্ম গ্রহণ করতে পারেন এবং যে কোনও ধর্মে বিবাহ করতে পারেন। ফলে আমাদের দেশে সেই সংস্কৃতি রয়েছে।’

নোবেলজয়ী এই বাঙালি অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার কথা খুব স্পষ্ট ভাবে বলা আছে। ফলে এমন আইন সংবিধানকেই অপমান করে।’

ঘটনাচক্রে সোমবারই ভিন্‌ধর্মী এক দম্পতিকে নিয়ে মামলার শুনানিতে রায় দিতে গিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট বলেছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক তরুণী যদি স্বামীর সঙ্গে থাকতে চান, নিজের ইচ্ছায় জীবন কাটাতে চান, সেই স্বাধীনতা তার রয়েছে।’

কথিত ‘লাভ জিহাদ’র অজুহাতে একের পর এক বিজেপিশাসিত রাজ্য যখন বিয়ের নামে ধর্মান্তকরণ প্রতিরোধী আইন কার্যকর করতে উঠেপড়ে লেগেছে, সেই সময় অমর্ত্য সেনের এমন মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দবাজার। 

এসএমডব্লিউ/এএস