প্রলোভনের মাধ্যমে ইসরায়েলি নাগরিকদের অপহরণের ফাঁদে ফেলতে ইরান ভুয়া ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে ইহুদি রাষ্ট্রটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তাদের দাবি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ইসরায়েলি নাগরিকদের ক্ষতি অথবা অপহরণ করতে তৎপর ইরান।

ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল জড়িত এবং এ ঘটনায় প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে সোমবার তেহরানের হুঁশিয়ারির কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েল এই দাবি জানাল।

সোমবার ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেত এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা এবং ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ যৌথভাবে একটি পরিকল্পনা শনাক্ত করতে পেরেছেন। আর তা হচ্ছে- ইরানের গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে ইনস্টাগ্রামে নারীদের ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে সেগুলোর মাধ্যমে ইসরায়েলিদের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। এসব ভুয়া অ্যাকাউন্টের বেশিরভাগই ব্যবসা ও পর্যটন সংক্রান্ত এবং এগুলোর মাধ্যমে ইসরায়েলিদের টার্গেট করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওই সব ভুয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তির কথা বলে ইসরায়েলি নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোমান্টিক সময় কাটাতে বা ব্যবসায়িক বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

শিন বেত জানিয়েছে, ইরানের এই ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সত্যিকার অর্থেই উদ্বিগ্ন। কারণ রোমান্টিক সময় কাটানো বা ব্যবসায়িক বৈঠকের কথা বলে তৃতীয় কোনো দেশে নিয়ে ইসরায়েলিদের অপহরণের ছক তৈরি করে থাকতে পারে ইরানের গোয়েন্দারা। সংস্থাটির দাবি, ইউরোপের প্রতিদন্দ্বী দেশগুলোর বিরুদ্ধেও ইরান একই ধরনের কৌশল অবলম্বন করতো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপি’কে জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সন্দেহজনক একটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার পর বৈঠকের জন্য এক ইসরায়েলি সম্প্রতি তৃতীয় একটি দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই ঘটনা জানার পর ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা ওই ব্যক্তিকে সতর্ক করে এবং দেশে ফিরিয়ে আনে।’

দীর্ঘদিন ধরে ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও সাম্প্রতিক সময়ে দেশ দু’টির মাঝে শত্রুতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া পরোক্ষ ভাবেও দেশ দু’টি একে অপরকে আঘাত করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানে ইরান ও ইসরায়েলের বাণিজ্যিক জাহাজে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে রোববার ইসরায়েল ‘নাশকতা’ চালিয়েছে দাবি করে কঠিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে তেহরান। সোমবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ বলেছেন, নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনা দুর্ঘটনায় ইসরায়েল জড়িত এবং এর প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাভেদ জারিফ বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পথে আমাদের অগ্রগতির কারণে ইহুদিবাদীরা প্রতিশোধ নিতে চায়... তারা প্রকাশ্যে বলেছে, তারা আমাদের এটি করতে দেবে না। কিন্তু আমরা ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিশোধ নেবো।’

এছাড়া ইসরায়েল চায় না ইরান ও বিশ্বের ছয় পরাশক্তির মধ্যে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা আবারও কার্যকর হোক। কারণ ইহুদিবাদী এই দেশটির বিশ্বাস, এই সমঝোতার মাধ্যমে দেশগুলোর সঙ্গে ইরান প্রতারণা করছে এবং মূলত গোপনে তারা পারমাণিক অস্ত্র তৈরির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও তেহরান বরাবরই নিজেদের এই ধরনের কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকার কথা অস্বীকার করে এসেছে।

সূত্র: এএফপি

টিএম