সামরিক অভ্যুত্থান, অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কারাঅন্তরীণ এবং অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ৭০০রও অধিক নিহত হওয়ায় চলতি বছর নববর্ষের উদযাপন থেকে বিরত থাকছে মিয়ানমারের সাধারণ জনগণ। বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

বার্মিজ ভাষায় মিয়ানমারের নববর্ষকে বলা হয় থিংগিয়ান। পাঁচ দিন ধরে চলে থিংগিয়ান উদযাপন। দেশটির প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী এই পাঁচদিন মিয়ানমারের বৌদ্ধ মন্দিরগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়, সাধারণ লোকজন মন্দিরগুলোতে যান প্রার্থনার উদ্দেশ্যে এবং সড়কগুলোতে ছিটানো হয় মন্ত্রপূত পানি।

মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় উৎসবও থিংগিয়ান। এই বছর মঙ্গলবার (১৩ এপিল) থেকে শুরু হয়েছে এই উৎসব।

তবে নববর্ষের প্রথম দিনে উৎসবের কোনো চিহ্ন ছিল না মিয়ানমারে। পরস্পরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও মন্দিরে প্রার্থনার পরিবর্তে এদিন দেশজুড়ে ছোট ছোট মিছিলে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা।

নববর্ষের দিনে গৃহসজ্জার জন্য বিশেষ ধরনের ফুলের টব বা পাত্র ব্যবহার করা হয়। সেই পাত্রে থাকে ৭ টি ফুল। মঙ্গলবার মিয়ানমারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা নববর্ষের ফুলের টব হাতে মিছিলে অংশ নিয়েছেন, টবের গায়ে লেখা- ‘মিয়ানমারকে রক্ষা করো’।

শেওই এই নামের এক বিক্ষোভকারী নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে বিক্ষোভের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এ পর্যন্ত মিয়ানমারে ৭০০ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা নববর্ষ উদযাপন করতে পারি না।’

সু সু সোয়ে নামে অপর এক বিক্ষোভকারী টুইটারে লিখেছেন, ‘আমরা নববর্ষ উদযাপন করছি না। যতদিন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হচ্ছে, ততদিন মিয়ানমারে নববর্ষ পালন করা হবে না।’

এদিকে প্রায় প্রতিদিনই মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো এবং নিহতের ঘটনা ঘটলেও মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত দেশটিতে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে বছরের প্রথম দিন উপলক্ষ্যে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালানো থেকে বিরত থেকেছে— এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই।

কারণ, মঙ্গলবার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও মোবাইল ডাটা ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে জান্তা সরকার। রয়টার্স অবশ্য দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য চেয়ে জান্তা সরকারের একাধিক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু যথারীতি কেউ ফোন ধরেননি।

এই নিয়ে পরপর দু’বছর নববর্ষ উদযাপন থেকে বিরত রইল মিয়ানমারের সাধারণ জনগণ। গত বছর দেশটিতে নববর্ষ উৎসব উদযাপন করা হয়নি করোনা মহামারির কারণে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ