‌‘আমি জন্মেছি এই ঘরে, আমি জন্মেছি এখানে, এখন আমি বসবাস করছি... আনন্দের সাথে বলি এই ঘরে আইআইএমের (ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট) একজন সহকারী অধ্যাপক জন্মগ্রহণ করেছেন... আমি আমার এই গল্প বলতে চাই। এই গল্প যদি কাউকে স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করে তবে সেটাই আমার সাফল্য।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এভাবে একটি পোস্ট করেছেন নৈশপ্রহরী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হওয়া ভারতের রঞ্জিত রামাচন্দ্র নামের এক যুবক। এই পোস্টে তিনি বলেছেন তার জীবনগল্প।

স্নাতকের পড়াশোনা চালানোর জন্য রাঁচির দারিদ্র এক পরিবারে বেড়ে ওঠা রঞ্জিত রামাচন্দ্র কেরালার স্থানীয় একটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসে কাজ নেন। সেখানে নৈশপ্রহরী হিসেবে রাতের বেলা কাজ করতেন, দিনে পড়াশোনা। দারিদ্র্য জয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার এই গল্প ফেসবুকে রঞ্জিত শেয়ার করার পর তা ভাইরাল হয়ে যায়।

২৮ বছরের রঞ্জিত যে ঘরে ঘুমাতেন; সেটি একেবারে জীর্নশীর্ণ। বৃষ্টি হলে টিনের ফুটো দিয়ে পানি ঢুকে পড়তো ঘরে। ঘুমাতে পারতেন না। ভাঙা ঘরের টিনের ওপরে ত্রিপল ছড়িয়ে বৃষ্টি ঠেকানোর ব্যবস্থা করেন; যাতে নির্বিঘ্নে একটু ঘুমানো যায়। 

ফেসবুকে ত্রিপলে মোড়ানো ঘরের সেই ছবি শেয়ার করে রঞ্জিত লিখেছেন, ‌‘আইআইএমের একজন অধ্যাপকের জন্ম এখানে।’

গত ৯ এপ্রিল ফেসবুকে এই পোস্ট করেন রঞ্জিত; যেখানে উঠে এসেছে তার সংগ্রামী এক জীবনের গল্প। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রঞ্জিতের এই পোস্টটি ফেসবুকে শেয়ার হয়েছে ১২ হাজারের বেশি। লাইক পড়েছে ৪১ হাজার এবং কমেন্ট করেছেন প্রায় ৮ হাজার মানুষ।

রঞ্জিত রামাচন্দ্র সামাজিক যোগাযােগমাধ্যমে ‌‘রঞ্জিত আর পানাথুর’ নামে পরিচিত। কেরালার কাসরাগোড জেলার অর্থমন্ত্রী টি এম থমাস আইস্যাক রঞ্জিতের এমন সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রঞ্জিতের পোস্ট শেয়ার করে থমাস আইস্যাক লিখেছেন, তিনি প্রত্যেকের অনুপ্রেরণার উৎস।

কাসরাগোড জেলার পানাথুরের বিএসএনএল কোম্পানির একটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জে নৈশপ্রহরী হিসেবে চাকরি নিয়েছিলেন রঞ্জিত। জেলার পায়াস টেনথ কলেজে অর্থনীতিতে স্নাতক করেছেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে মাদ্রাজে যান তিনি।

রঞ্জিত লিখেছেন, আমি দিনে কলেজে যেতাম এবং রাতে টেলিফোন এক্সচেঞ্জে কাজ করতাম। স্নাতক শেষ করার পর তিনি মাদ্রাজের আইআইটিতে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ তিনি শুধুমাত্র মালয়লাম ভাষা জানতেন। হতাশ হয়ে পিএইচডির পড়াশোনা না করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু আইআইটির অধ্যাপক ও পরামর্শক ডা. সুভাষ তাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেন।
 
তিনি লিখেছেন, ‌‘আমি লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং আমার স্বপ্ন অনুধাবন করি।’ এই লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন রঞ্জিত।

গত বছর ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন তিনি। গত দুই মাস ধরে বেঙ্গালুরুর ক্রিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চাকরি করছেন তিনি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যাবে আমি কখনো চিন্তা করতে পারি নাই। অল্প কিছু মানুষকে যাতে অনুপ্রাণিত করতে পারে সেজন্য আমার জীবনের গল্প পোস্ট করেছি। আমি চাই প্রত্যেকে ভালো স্বপ্ন দেখুক এবং তাদের সেই স্বপ্নের জন্য লড়াই করুক। এই গল্প থেকে অন্যরা অনুপ্রেরণা পাক এবং সফলতা খুঁজুক।

ফেসবুক পোস্টে রামাচন্দ্র তার স্কুল জীবনে কি ধরনের কঠিন পরিস্থিতি ও আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিলেন সেই গল্পও বলেছেন। তার বাবা ছিলেন একজন দর্জি এবং মা মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি প্রকল্পে দিনমজুরের কাজ করতেন।

কাসরাগোডের অর্থমন্ত্রী আইস্যাক রামাচন্দ্রের প্রশংসা করে ফেসবুকে বলেছেন, যখন তিনি (রামাচন্দ্র) হেরে যাবেন বলে মনে করেছিলেন; ঠিক সেই মুহূর্তে জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন এবং সফলতা অর্জন করেছেন। এটা প্রত্যেকের জন্য একটি অনুপ্রেরণার গল্প। 

এসএস