গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিসের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করে দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। পার্থেনন ভাস্কর্য বিতর্কে শেষ মুহূর্তে এই বৈঠকটি বাতিল করে দেওয়া হয়।

এছাড়া সুনাক বৈঠক বাতিল করার পর যুক্তরাজ্যের উপ-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিকল্প বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও মিৎসোটাকিস সেটিও প্রত্যাখ্যান করেছেন। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলগিন মার্বেল নামে পরিচিত পার্থেনন ভাস্কর্য নিয়ে ব্রিটিশ ও গ্রীক সরকারের মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। গ্রীক প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিসের লন্ডনে ঋষি সুনাকের সাথে দেখা করার কথা ছিল, কিন্তু যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট শেষ মুহূর্তে সেই বৈঠকটি বাতিল করে দেয়।

প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস সাংবাদিকদের বলেছেন, বৈঠকটি ‘আচমকা বাতিল হওয়ায় তিনি গভীরভাবে হতাশ’। এছাড়া সুনাকের পরিবর্তে ব্রিটিশ উপ-প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিকল্প বৈঠকও প্রত্যাখ্যান করেছেন মিৎসোটাকিস।

বিবিসি বলছে, পার্থেনন ভাস্কর্য নিয়ে ব্রিটিশ ও গ্রীক সরকারের মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। মিৎসোটাকিস এর আগে বিবিসির লরা কুয়েনসবার্গকে বলেছিলেন, এই মার্বেলগুলো যুক্তরাজ্যের ফেরত দেওয়া উচিত। তার মতে, লন্ডনে কিছুটা রাখার পাশাপাশি বাকিগুলো এথেন্সে থাকা মানে মোনালিসাকে অর্ধেক কেটে ফেলার মতো।

মূলত তার এই মন্তব্যের একদিন পরই প্রধানমন্ত্রী সুনাকের পক্ষ থেকে বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্ত সামনে এলো।

গ্রীক প্রধানমন্ত্রী সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মাত্র কয়েক ঘণ্টা’ আগে বৈঠকটি বাতিল করায় তিনি হতাশ হয়েছেন। তিনি বলেছেন: ‘যারা দৃঢ়ভাবে তাদের ন্যায্য অবস্থানে বিশ্বাস করে তারা কখনোই গঠনমূলক তর্ক ও বিতর্ক করতে দ্বিধাবোধ করে না।’

প্রধানমন্ত্রী মিৎসোটাকিস আরও বলেছেন: ‘গ্রিস এবং ব্রিটেনের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে এবং আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিধি অনেক বিস্তৃত।’

তিনি বলেন, ‘পার্থেনন ভাস্কর্যের বিষয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত সুপরিচিত। আমি এই বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। এর পাশাপাশি গাজা এবং ইউক্রেনের পরিস্থিতি, জলবায়ু সংকট এবং অভিবাসনের মতো উল্লেখযোগ্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনার প্রত্যাশা করেছিলাম।’

বিবিসি বলছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গ্রীক সরকারের মেজাজ সম্পর্কে জ্ঞাত এমন বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠক বাতিলের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী মিৎসোটাকিস ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ এবং ‘বিরক্ত’ হয়েছেন। বৈঠকটি মঙ্গলবার দুপুরের খাবারের সময় হওয়ার কথা ছিল এবং এটির দৈর্ঘ্য হওয়ার কথা ছিল ৪৫ মিনিট।

কিন্তু রোববার বিবিসির লরা কুয়েনসবার্গের অনুষ্ঠানে গ্রীক প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে বিরক্ত করে। পরে ব্রিটিশ সরকার বৈঠক বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে এবং সুনাকের পরিবর্তে গ্রীক প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিটেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী অলিভার ডাউডেনের সাথে বৈঠকের প্রস্তাব দেয়।

ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বলেছেন: ‘এলগিন মার্বেল সম্পর্কিত মন্তব্যের পরে গ্রীক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত ওই বৈঠকটি এগিয়ে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।’

তার দাবি, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। এলগিন মার্বেলগুলো ব্রিটিশ মিউজিয়ামের স্থায়ী সংগ্রহের অংশ এবং এখানেই রয়েছে। এটি নিয়ে আলোচনা করা যেকোনও ব্রিটিশ রাজনীতিকের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ।’

বিবিসি বলছে, প্রধানমন্ত্রী মিৎসোটাকিস এর আগে ব্রিটেনের লেবার নেতা কেয়ার স্টারমারের সাথে দেখা করেন। সুনাকের সঙ্গে বৈঠক বাতিলের পর তিনি এখন মঙ্গলবার সকালে তার নির্ধারিত অন্য কয়েকটি বৈঠকের পর গ্রিসে ফিরে যাবেন।

টিএম