ভারতে করোনাভাইরাস মহামারি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সারা দেশে সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এই অবস্থায় মুম্বাইয়ের পাঁচ তারকা হোটেলগুলোকে অস্থায়ী হাসপাতাল বা কোভিড সেন্টার হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) শহর কর্তৃপক্ষ একথা জানায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, অপেক্ষাকৃত কম ঝুকিপূর্ণ বা করোনার হালকা উপসর্গ থাকা রোগীদের পাঁচ তারকা হোটেলে রেখে চিকিৎসা করা হবে। চিকিৎসকরাই নির্ধরাণ করবেন যে, কে হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন আর কে পাঁচ তারকা হোটেলে। আপাতত মুম্বাইয়ের দু’টি পাঁচ তারকা হোটেলে এই কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, করোনা মহামারির কারণে বিদ্যমান স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংকট মোকাবিলায় মুম্বাইয়ের বেসরকারি হাসপাতালগুলো শহরের চার ও পাঁচ তারকা হোটেলগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে। সমঝোতা অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হলেও শারীরিক অবস্থা গুরুতর নয় এমন রোগীদের হোটেলগুলোতে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জায়গা সংকুলান না হওয়ার যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হতে পারে।

এদিকে নির্দিষ্ট শয্যার অভাবে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা না দিয়ে রোগীদের ফেরত পাঠানো বন্ধ করতে মুম্বাইয়ের মতো শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে দিল্লির রাজ্য সরকার। বুধবার (১৪ এপ্রিল) শহরের করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল সংলগ্ন হোটেলগুলোকে হাসপাতাল বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে আম আদমি পার্টি (এএপি) সরকার।

অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রশাসন জানিয়েছে, দিল্লির ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে দিল্লির রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন হোটেলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে ।

দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিভিন্ন হোটেলের সঙ্গে কথা বলে কেজরিওয়াল সরকার একটি তালিকা করেছে। তালিকায় নাম থাকা হোটেলগুলোকে হাসপাতালের বর্ধিত অংশ হিসেবে রূপ দিয়ে ব্যবহার করা হবে।

মোট ২৩টি হোটেল এই তালিকায় রয়েছে। এই ২৩টি হোটেলের মাধ্যমে ২ হাজার ১১২টি শয্যা বাড়ানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে কেজরিওয়াল প্রশাসন। প্রথম দফায় ২ হাজার ১১২টি ও দ্বিতীয় দফায় ২৮২টি শয্যা বাড়ানো হবে।

দিন দুয়েক আগেই ১৪টি হোটেলকে সম্পূর্ণ কোভিড হাসপাতালের মর্যাদা দেয় দিল্লি সরকার। এরপর বুধবার আরও কয়েকটি হাসপাতালকে এই তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় রীতিমতো কাঁপছে ভারত। দেশটিতে ভয়াবহভাবে বেড়েই চলেছে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। বৃহস্পতিবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৭৩৯ জন। এতে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ। মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যায় বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ভারত। তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরই দেশটির অবস্থান।

করোনায় আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এলেও মৃতের তালিকায় দেশটির অবস্থান চতুর্থ। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৮ জনের। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে মোট মারা গেলেন এক লাখ ৭৩ হাজার ১২৩ জন।

সূত্র: এনডিটিভি

টিএম