মিয়ানমারের সামরিক জান্তাবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর এক প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক করেছে দেশটির সামরিক সরকার। চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের সাথে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সোমবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।

দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির রাজনৈতিক দল এনএলডি নির্বাচনে জয়ের পর ক্ষমতায় তাদের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর ঠিক আগে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। তারপর থেকেই দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়েছে দেশটির বেসামরিক জনগণ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর। সম্প্রতি দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জোট গড়ে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করেছে।

দেশটির কয়েকটি ফ্রন্টে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের হামলায় লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিদ্রোহীদের কাছে নিজেদের ঘাঁটি ও নিরাপত্তা চৌকির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা বাহিনী।

বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট নামের একটি জোট গঠন করে গত অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে হামলা শুরু করে। দেশটির উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলীয় চীন সীমান্ত লাগোয়া একাধিক শহর ও সামরিক নিরাপত্তা চৌকির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এই জোটের সদস্যরা।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জ্য মিন তুন বলেন, ‘‘মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য ও শান্তিপ্রক্রিয়া সমন্বয় কমিটি চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীগোষ্ঠী এমএনডিএএ, টিএনএলএ এবং এএর প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছে।’’

সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলায় সশস্ত্র জাতিগত এই তিন গোষ্ঠী নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম এমআরটিভিকে জানিয়েছেন তিনি। জ্য মিন তুন বলেন, আলোচনার ওপর ভিত্তি করে চলতি মাসের শেষের দিকে উভয়পক্ষের মাঝে আরেকটি বৈঠক হতে পারে

তবে বিদ্রোহীদের সাথে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রতিনিধিদের বৈঠক কোথায় এবং কখন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেটি পরিষ্কার নয়। এছাড়া বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেই বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য জানাননি জ্য মিন তুন।

বৈঠকের বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে ওই তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এই বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চীনা কর্মকর্তাদেরও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মিয়ানমারের দুই-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডজুড়ে সামরিক বাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ চলাকালীন এই বৈঠকের বিষয়ে জানিয়েছে জান্তা। বিদ্রোহী-জান্তার লড়াইয়ে গত কয়েক মাসে ৩৬০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। এই সংঘাতে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন পাঁচ লাখের বেশি মানুষ।

এসএস