গাজায় ২য় দফা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে আরও সময় লাগবে : নেতানিয়াহু
হামাসের কব্জায় এখনও যেসব জিম্মি রয়েছেন, তাদের উদ্ধারে ২য় দফা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পাদনে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। রোববার পার্লামেন্টে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
পার্লামেন্টে যখন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন নেতানিয়াহু, সেসময় পার্লামেন্ট গ্যালারিতে উপস্থিত এমপিরা সমস্বরে ২য় দফা যুদ্ধবিরতির দাবিতে সরব হন। তারা জানতে চান, অবশিষ্ট জিম্মিদের উদ্ধারে বর্তমান যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার পরিকল্পনা কী?
বিজ্ঞাপন
জবাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা এখনই কিছু বলতে পারছি না। কারণ ইসরায়েলি বাহিনীর ফিল্ড কমান্ডারদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমার কথা হয়েছে; তারা বলেছে, বর্তমানে তাদের মিশন যে পর্যায়ে রয়েছে…. তাতে যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষরের মতো পরিস্থিতি আসতে আরও কিছুটা সময় নেবে।’
‘কমান্ডাররা আমাকে আরও বলেছে, এই মুহূর্তে যদি কোনো চুক্তি হয়, তাহলে তা উপত্যকায় চলমান সামরিক অপারেশন বা মিশনের জন্য ক্ষতিকর হবে। আমরা কেউই চাই না (গাজায়) সামরিক অপারেশন বাধাগ্রস্ত হোক। কারণ এর সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তার প্রশ্ন সরাসরি যুক্ত।’
বিজ্ঞাপন
‘তবে আমাদের সেনা সদস্যরা জিম্মিদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হামাসের কব্জা থেকে জিম্মিদের মুক্ত করা গাজায় চলমান মিশনের প্রধান লক্ষ্য।’
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু,অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন।
সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ৫২ হাজার ৫৮৬ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৬ হাজার ৭০০ জন।। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
অন্যদিকে, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা।
এই জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১০৪ জন। বাকি ১৩৬ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা রয়েছেন; এবং রয়েছেন শিশু, নারী, তরুণ-তরুণী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধা— সব বয়সী মানুষ।
টানা দেড় মাস ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতিস্বীকার করে গত ২৫ নভেম্বর অস্থায়ী বিরতি ঘোষণা করে হামাস-ইসরায়েলি বাহিনী। পরে ১ ডিসেম্বর দু’পক্ষের পারস্পরিক হামলার শুরুর মধ্যে দিয়ে শেষ হয় সেই বিরতি।
৭ দিনের অস্থায়ী বিরতির সময় নিজের কব্জায় আটক জিম্মিদের মধ্যে থেকে ১১৮ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস; বিপরীতে এই সময়সীমায় ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে।
এদিকে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক দল লিকুদ পার্টি থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোমবার গাজা উপত্যকা সফরে গিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে গাজায় অভিযান আরও ব্যাপক ও তীব্র হবে।
সূত্র : এএফপি
এসএমডব্লিউ