যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (ফাইল ছবি)

টানা প্রায় তিন মাস ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত চলছে। চলমান এই সংঘাতে সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় আগ্রাসন চালাতে ইসরায়েলে দ্রুত অস্ত্র সরবরাহ করার পাশাপাশি দেশটি বিমানবাহী রণতরীও পাঠিয়েছে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে।

অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র নীরব। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গাজা নীতির প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন তার প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষা কর্মকর্তা।

এমনকি গাজা ইস্যুতে আগামী নির্বাচনে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভোট হারাতে পারেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত ১৭ জন কর্মী। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গাজায় সংঘাত পরিচালনার কথা উল্লেখ করে মার্কিন শিক্ষা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বুধবার পদত্যাগ করেছেন। গাজায় চলমান যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনে ভিন্নমতের ব্যক্তিদের সরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

এছাড়াও বুধবার বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত ১৭ জন কর্মী একটি বেনামী চিঠিতে সতর্কতা জারি করে বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ ইস্যুতে ভোটারদের হারাতে পারেন বাইডেন।

রয়টার্স বলছে, বুধবার পদত্যাগ করা ওই জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তার নাম তারিক হাবাশ। তিনি মার্কিন শিক্ষা বিভাগের পরিকল্পনা, মূল্যায়ন ও নীতি উন্নয়নের অফিসের বিশেষ সহকারী পদে ছিলেন।

বুধবার শিক্ষামন্ত্রী মিগুয়েল কার্ডোনাকে লেখা এক চিঠিতে তারিক হাবাশ বলেছেন: ‘এই (বাইডেন) প্রশাসন যখন নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার বিষয়ে চোখ বন্ধ করেছে তখন আমি নীরব থাকতে পারি না। নেতৃস্থানীয় মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা গাজায় আগ্রাসনকে ইসরায়েলি সরকারের গণহত্যামূলক অভিযান বলে অভিহিত করেছেন।’

তারিক হাবাশ একজন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান এবং ছাত্র ঋণের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। ২০২১ সালে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিকেই তাকে মার্কিন শিক্ষা বিভাগে নিয়োগ করা হয়েছিল।

এদিকে বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত ১৭ জন কর্মী বেনামী এক চিঠিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ওই কর্মীরা চিঠিতে লিখেছেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণা সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবকরা দলে দলে পদত্যাগ করছেন। যেসব মানুষ গত কয়েক দশক ধরে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে ভোট দিয়ে এসেছেন, তারা গাজায় চলমান সংঘাতের কারণে প্রথমবারের মতো আগের মতোই ভোট দেওয়া নিয়ে অনিশ্চিত বোধ করছেন।’

বাইডেনের প্রচারণা দল অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

াদিকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বুধবার বলেছেন, গাজায় গণহত্যা চলছে বলে এমন কোনও কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেনি যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হওয়া কার্যক্রমের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

এছাড়া ইসরায়েলও গাজায় গণহত্যার দাবি অস্বীকার করেছে। তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে তুরস্ক।

অবশ্য বাইডেনের গাজা নীতির প্রতিবাদে তার প্রশাসন থেকে কর্মকর্তাদের পদত্যাগের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ সমর্থনের অভিয্গে তুলে গত বছরের অক্টোবরে পদত্যাগ করেন জোশ পল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোতে কংগ্রেসনাল এবং পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক ছিলেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই বিভাগটি বিদেশে অস্ত্র স্থানান্তর ও সরবরাহের কাজ পরিচালনা করে থাকে।

জোশ পল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোতে কংগ্রেসনাল এবং পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক হিসেবে ১১ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন। পদত্যাগের সময় তিনি বলেন, তিনি এমন একটি চাকরি চালিয়ে যেতে পারছেন না যা ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের প্রাণহানির জন্য অবদান রাখছে।

মূলত মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের জোরালো সমর্থনের বিষয়ে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ যে অস্বস্তি রয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এইভাবে পদত্যাগ আসলে সেটিকেই সামনে এনে দিচ্ছে। যদিও এই ধরনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে খুবই বিরল।

এছাড়া গত বছরের নভেম্বরে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এর এক হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বাইডেন প্রশাসনকে লেখা একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। পেশাগতভাবে ওই কর্মকর্তারা ছিলেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের অংশ।

আর গত ডিসেম্বরে বাইডেন প্রশাসনের কিছু কর্মী গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে হোয়াইট হাউসের কাছে একটি কর্মসূচি পালন করেছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৫৭ হাজার মানুষ। ইসরায়েলের এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরসহ বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

টিএম