যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের একটি নতুন ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। নতুন এই ধরনটির নাম দেওয়া হয়েছে বি১৬১৭। দেশটির স্বাস্থ্যবিভাগ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে ভাইরাসের এই ধরনটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭ জন।

আক্রান্ত ৭৭ জনের মধ্যে ৭৩ জন ইংল্যান্ডের, বাকি ৪ জন স্কটল্যাল্ডের। ব্রিটেনের সরকারি স্বাস্থ্যবিভাগের ইংল্যান্ড শাখা পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই) ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের এই ধরনটিকে ‘অনুসন্ধানাধীন’ ধরনের তকমা দিয়েছে।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে পিএইচইর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘সম্প্রতি ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের একটি নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। পিএইচই এই ধরনটির সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য অনুসন্ধান করছে। এখন পর্যন্ত এই ধরনটিতে ইংল্যান্ডে ৭৩ জন এবং স্কটল্যান্ডে ৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন।’

চিকিৎসা শাস্ত্রের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মানুষের দেহে কোনো জীবানু প্রবেশ করলে প্রথমে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিষয়টি স্নায়ুকে জানান দেয়, তারপর রক্তের শ্বেত রক্তকণিকা সেই জীবানুকে নিষ্ক্রিয় করে। কিন্তু পিএইচইর গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ভারতীয় এই ধরনটি মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম।

‘পিএইচইর প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, বি১৬১৭ নামে করোনাভাইরাসের এই ধরনটি প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ভারতে। তারপর দুটি উল্লেখযোগ্য অভিযোজনের (মিউটেশন) মধ্যে দিয়ে গেছে এটি। এই ধরনটি মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে মানবদেহে প্রবেশ করা এবং শ্বেত রক্তকণিকার ক্ষতি সাধনে পারঙ্গম।’

‘প্রতি সপ্তাহেই ব্রিটেনে এই ধরনটির দ্বারা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যুক্তরাজ্য সরকারকে পিএইচই সুপারিশ করছে— করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটির আগমনের প্রেক্ষিতে জনগণকে যেন যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি চলতে নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের আওতা যেন বাড়ানো হয়।’

পিএইচইর গবেষকরা আরো জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের ভারতীয় এই ধরনটির অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা আছে। এদিক থেকে এই ধরনটি ব্রিটেনে শনাক্ত হওয়া ধরনটির চেয়েও শক্তিশালী এবং এর সংক্রমণ ক্ষমতা দক্ষিণ আফ্রিকান ধরনটির প্রায় কাছাকাছি।

বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের যে ধরনগুলো শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতা রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকান ধরনটির।

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এ রোগে পর্যুদস্ত অবস্থায় থাকা দেশগুলোর অন্যতম ছিল ব্রিটেন। তবে দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন, ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ এবং ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচির মতো পদক্ষেপ নেওয়ায় সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে দেশটি।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ব্রিটেনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯৩৮ জন; এ রোগে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছেন ২ হাজার ২০৬ জন। শুক্রবার দেশটিতে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৯৬ এবং এ রোগে সেদিন দেশটিতে মারা গেছেন ৩১ জন।

করোন সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি ব্রিটেনে টিকাদান কর্মসূচিও চলছে জোরকদমে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছ, ব্রিটেনে এ পর্যন্ত ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ করোনা টিকা নিয়েছেন।

এসএমডব্লিউ