হামাস-ইসরায়েলের সংঘাত শুরুর পর থেকে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নিয়মিতভাবেই সীমান্তে গুলিবিনিময় করছে (প্রতীকী ছবি)

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় টানা সাড়ে তিন মাস ধরে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। এর জেরে লেবানন সীমান্তেও হামলার মুখে পড়েছে ইহুদিবাদী এই দেশটি। লেবাননের ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে আসছে।

এই পরিস্থিতিতে সরাসরি লেবাননে হামলার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি বলেছে, হিজবুল্লাহ সীমান্ত এলাকা ছেড়ে না দিলে লেবাননে হামলা চালাবে তারা। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল বৃহস্পতিবার হুমকি দিয়ে বলেছে- যদি হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী দক্ষিণ লেবাননের সীমান্ত এলাকা থেকে সরে না আসে তাহলে লেবাননে হামলা চালাবে তারা। ইতালীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানির সাথে এক বৈঠকে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ একথা বলেন।

আনাদোলু বলছে, বৃহস্পতিবার পশ্চিম জেরুজালেমে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইসরায়েল কাটজের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সময় কাটজ দক্ষিণ লেবানন থেকে হিজবুল্লাহকে উৎখাত করতে লেবাননের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, অন্যথায় লেবাননকে এমন একটি বিধ্বংসী আঘাতের সম্মুখীন হতে হবে যা থেকে দেশটিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না।

গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েলের সংঘাত শুরুর পর থেকে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নিয়মিতভাবেই সীমান্তে গুলিবিনিময় করছে। হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর এটিই ইসরায়েল-লেবানিজ সীমান্তে সবচেয়ে খারাপ সহিংসতার ঘটনা।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুসারে, কাটজ এবং তাজানি ইসরায়েলে ইতালীয় এয়ারলাইন কার্যক্রম পুনর্নবীকরণের পাশাপাশি জ্বালানি ও পর্যটনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সম্মত হয়েছেন।

এদিকে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেন, তিনি গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘যৌথ মানবিক উদ্যোগ জোরদার করতে’ কাটজের সাথে সম্মত হয়েছেন এবং ‘গাজা থেকে ১০০ জন (আহত) শিশুর ইতালিতে চিকিৎসা করার জন্য তার দেশের প্রস্তুতির কথা বলেছেন।’

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগের সাথে তার বৈঠকের কথা উল্লেখ করে এক্সে পৃথক টুইটে তিনি বলেন, তার দেশ ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির একমাত্র উপায় হিসাবে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের অবিরাম নির্বিচার এই হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৬৩ হাজার ৭৪০ জন।

ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ কোনও ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।

টিএম