ইরানে মৃত্যুদণ্ড রোধ করার দাবিতে লন্ডনে এক প্রতিবাদ কর্মসূচি

বিশ্বে ২০২০ সালে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তার চারটিই মধ্যপ্রাচ্যের। আজ বুধবার এমন তথ্যই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।

এই মানবাধিকার সংস্থা তাদের প্রকাশ করা এক রিপোর্টে বলছে, গত বছর গোটা বিশ্বে যে ৪৮৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, তার ৮৮ শতাংশই হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশে। দেশগুলো হলো ইরান, মিসর, ইরাক এবং সৌদি আরবে।

অ্যামনেস্টি বলছে, বাকি দুনিয়ার বেশিরভাগ দেশ যখন এক মারাত্মক ভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, তার মধ্যেও এসব দেশ ‘নিষ্ঠুরভাবে এবং ঠাণ্ডা-মাথায়’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মতো এই কাজ অব্যাহত রেখেছে।

অ্যামনেস্টির সম্প্রতি প্রকাশিত ওই রিপোর্ট অনুযায়ী গত এক দশকের মধ্যে গত বছরই সবচেয়ে কম সংখ্যায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তবে অ্যামনেস্টির এই তালিকায় সংখ্যায় চীনকে রাখা হয়নি।

ধারণা করা হয়, চীনে প্রতি বছরে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে তা রাষ্ট্রীয়ভাবে গোপন রাখা হয়। উত্তর কোরিয়া এবং ভিয়েতনামেও এই বিষয়ে একই রকম কঠোর গোপনীয়তা রয়েছে, ফলে এসব দেশের পরিস্থিতি যাচাই করা প্রায় অসম্ভব।

গত বছর ১৮টি দেশে যে ৪৮৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা অ্যামনেস্টির রিপোর্টে রয়েছে; যা ২০১৯ সালের তুলনায় ২৬ শতাংশ কম। ২০১৯ সালে বিশ্বে ৬৫৭ জনের মৃত্যুদণ্ড  কার্যকর করা হয়েছিল।

সৌদি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর কমলেও শীর্ষ পাঁচে রয়েছে দেশটি।

অ্যামনেস্টির রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল, ১ হাজার ৬৩৪ জনের। সেখান থেকে গত বছর তা কমে আসে ৭০ শতাংশ।

মধ্যপ্রাচ্যে সার্বিকভাবে কার্যকর করা মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা ২০১৯ সালের ৫৭৯ হতে ২০২০ সালে ৪৩০-এ নেমেছে। গত বছর মূলত সৌদি এবং ইরাকে সরকারি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে এই সংখ্যা কমেছে বলে মনে করা হয়।

গতবছর সৌদি আরবে সরকারি হিসেবে ২৭ জনের দণ্ড কার্যকর করা হয়; যা আগের বছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ কম। আর ইরাকে গত বছর ৪৫ জনের দণ্ড কার্যকর করা হয়, যা আগের বছরের তুলনায় অর্ধেক।

অ্যামনেস্টির রিপোর্ট বলছে, একদিকে যখন দুটি দেশে এই সংখ্যা কমেছে, তখন আবার মিসরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার বেড়ে গেছে ৩০০ শতাংশ। গত বছর মিসর ১০৭ জনের দণ্ড কার্যকর করেছে। সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের তালিকায় তৃতীয় স্থানে।

যাদের এভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তাদের ২৩ জনের সাজা হয়েছিল রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে। অ্যামনেস্টি বলছে, জোর করে আদায় করা স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে এদের অন্যায্য বিচারের মাধ্যমে এই দণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

গত অক্টোবর-নভেম্বরে মিসরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার বাড়ে। দুই মাসে ৫৭ জনের দণ্ড কার্যকর করা হয়। মিসরের আল-আকরাব কারাগার থেকে বন্দি পালানোর এক ব্যর্থ চেষ্টার সময় কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন বন্দি নিহত হয়েছিল।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যার দিক থেকে চীনের পর দ্বিতীয় স্থানে আছে ইরান। সেখানে গত বছর ২৪৬ জনের দণ্ড কার্যকর করা হয়।

অ্যামনেস্টি বলছে, ইরানের কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক নির্যাতনের একটি অস্ত্র হিসেবে এখন রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, প্রতিবাদকারী এবং সংখ্যালঘু জাতির মানুষদের বিরুদ্ধে আরও বেশিহারে মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি দিচ্ছে।

ইরানে এমন তিন জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, অপরাধ করার সময় যাদের বয়স ছিল ১৮ বছরের নীচে। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।

মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কাতার গত বিশ বছরে প্রথমবারের মতো কোন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল গত বছর। অ্যামনেস্টি এটিকে একটি ‘উদ্বেগজনক পশ্চাতমুখী’ পদক্ষেপ বলে নিন্দা করেছে। 

এএস