সদ্য-সমাপ্ত নির্বাচনে কারচুপি হওয়ায় পাকিস্তানে আর্থিক সহায়তা বাতিলের আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে চিঠি লিখছেন দেশটির কারান্তরীণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা আইএমএফকে চিঠি দেবেন বলে বৃহস্পতিবার দলটির নেতা আলী জাফর ঘোষণা দিয়েছেন।

রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন পিটিআই নেতা আলী জাফর। এ সময় তিনি বলেন, আজই (বৃহস্পতিবার) আইএমএফকে চিঠি দেবেন ইমরান খান। আইএমএফ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অন্যান্য সংস্থার সনদে বলা আছে, কেবল সুশাসন থাকলেই তারা যেকোনও দেশে কাজ করতে বা ঋণ দিতে পারে।

জাফর বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সনদের ‘‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারা’’ হল একটি দেশকে গণতান্ত্রিক হতে হবে। যদি গণতন্ত্র না থাকে, তাহলে এসব সংস্থা সেসব দেশে কাজ করতে পারে না, তাদের করা উচিতও না।’’

‘‘গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হল একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। গোটা বিশ্ব দেখেছে কীভাবে জাতির ম্যান্ডেট চুরি করা হয়েছে। প্রাক-নির্বাচন কারচুপির কথা বাদ দেওয়া হলেও ভোট-পরবর্তী কারচুপিতে পিটিআইয়ের বিজয়ী প্রার্থীদের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।’’

সিনেটর আলী জাফর বলেছেন, রাতের আঁধারে জনগণের ভোট চুরি হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের ফলাফল যাচাই-বাছাই না করে বেলআউট প্যাকেজ চেয়ে আইএমএফের কাছে যাওয়াটা দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে।

ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির সাথে সাক্ষাতের অনুমতি না দেওয়ায় প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন তিনি। সাব-জেল হিসেবে ঘোষণা দেওয়া ইমরান খানের বানি গালার বাসভবনে বন্দি রয়েছেন বুশরা বিবি।

গত বছর আইএমএফের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেল আউট প্যাকেজ পেয়েছে পাকিস্তান। আইএমএফের এই সহায়তা দেশটিকে ঋণ খেলাপি হওয়া এড়াতে সাহায্য করেছিল। আগামী মাসের এই প্যাকেজের আওতায় সহায়তা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। এখন নতুন করে আরও বড় অংকের বেলআউট প্যাকেজের জন্য আইএমএফের দ্বারস্থ হবে দেশটির ভবিষ্যৎ সরকার।

এদিকে, দুই সপ্তাহের দর-কষাকষির পর পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। সমঝোতা অনুযায়ী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে নওয়াজ শরিফের ভাই শেহবাজ শরিফ এবং প্রেসিডেন্ট পদে আসিফ আলী জারদারি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

মঙ্গলবার পিএমএল-এন এবং পিপিপির সমন্বয় কমিটি দীর্ঘ আলোচনার পর সরকার গঠনের চুক্তি চূড়ান্ত করেছে। পাকিস্তানে গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কোনও দলই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন পায়নি। যে কারণে দেশটিতে ঝুলন্ত সংসদ ঘিরে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সরকার গঠনের জন্য দেশটির প্রধান তিন রাজনৈতিক দল মিত্রদের সাথে জোট করার বিষয়ে জোরাল প্রচেষ্টা শুরু করে। এর মাঝেই মঙ্গলবার পুরোনো দুই জোটসঙ্গী পিএমএল-এন এবং পিপিপি নতুন করে সরকার গঠনের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে পিএমএল-এন ৭৯টি আসন নিয়ে জাতীয় পরিষদের বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর পিপিপি পেয়েছে ৫৪টি আসন। অন্য আরও চারটি দলকে সঙ্গে নিয়ে ৩৩৬ আসনের জাতীয় পরিষদে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছে পিএমএল-এন ও পিপিপি। যদিও নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৯২টি আসনে জয় পেয়েছে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

২৪ কোটিরও বেশি মানুষের এই দেশটিতে সরকার গঠন নিয়ে শুরু হওয়া টানাপোড়েন ঘিরে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্থর গতির প্রবৃদ্ধি আর রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান জঙ্গি হামলার মাঝে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ও কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দেশটিতে স্থিতিশীল প্রশাসন দরকার।

সূত্র: জিও নিউজ, ডন।

এসএস