সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ২১ দিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার বিধান থাকলেও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি তা উপেক্ষা করছেন বলে অভিযোগ করেছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। রোববার পিপিপির নেত্রী শাজিয়া মারি ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ও দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলভির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন।

শাজিয়া মারি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি নতুন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন তলবে বিলম্ব করে ‘‘ক্ষমতার অপব্যবহার’’ করছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর সারসংক্ষেপে বিলম্ব না করে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করা প্রেসিডেন্টের জন্য আবশ্যক। এক ব্যক্তির আদেশের পরিবর্তে সংবিধান মেনে চলা উচিত প্রেসিডেন্টের।’’

পিপিপির এই নেত্রী বলেছেন, আলভি একই প্রেসিডেন্ট যিনি অতীতেও ‘‘অসাংবিধানিকভাবে’’ জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেন, আলভির সংবিধান লঙ্ঘন এবং পদের অপব্যবহার ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। পিপিপির এই নেত্রী বলেন, জাতীয় পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় প্রেসিডেন্ট অধিবেশন আহ্বান করতে বাধ্য। 

এদিকে, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) সাবেক সচিব কানওয়ার দিলশাদ বলেছেন, সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ২১ দিন পরে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টকে ২১ দিনের মধ্যেই অধিবেশন আহ্বান করতে হবে। আর এই সময়সীমা ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কানওয়ার দিলশাদ বলেন, প্রেসিডেন্ট যদি অধিবেশন আহ্বান করা থেকে বিরত থাকেন, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অধিবেশন আহ্বানে স্পিকারের কাছে চিঠি লিখতে পারেন।

‘‘কিন্তু তারপর যে প্রশ্নটি ওঠে তা হল, যেহেতু তারা (নির্বাচিত প্রতিনিধিরা) এখনও শপথ নেননি, তাই স্পিকার অধিবেশনের অনুরোধ জানাতে পারেন না। কারণ স্পিকারের ক্ষমতা নেই, প্রেসিডেন্টের আছে,’’ বলেন তিনি।

পাকিস্তানে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও কোনও দলই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে কারাবন্দি নেতা ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই)— ৯২টি আসন।

পিটিআইয়ের পর এই তালিকায় যথাক্রমে রয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন)— ৭৫টি আসন, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)— ৫৪টি আসন, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম)— ১৭টি আসন, জামায়াতে উলামায়ে ইসলাম- ফজলুর (জেইউআইএফ)—৪টি আসন এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা পেয়েছেন ৯টি আসন।

অর্থাৎ কোনো দলই এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম আসন পায়নি। এই অবস্থায় জোট সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয় পিএমএলএন এবং পিপিপির মধ্যে। ১২ দিন ধরে আলোচনার পর ঐকমত্যে পৌঁছায় পিএমএলএন এবং পিপিপি। সিদ্ধান্ত হয়— পিএমএলএনের চেয়ারম্যান শেহবাজ শরিফ পাকিস্তানের নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন, আর রাষ্ট্রপতি হবেন পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিতা ও দলটির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি।

দেশটির রাজনৈতিক সূত্র বলছে, আগামী ৯ মার্চ পাকিস্তানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পিপিপি ও পিএমএল-এন তাদের ক্ষমতা ভাগাভাগির আলোচনার সময় রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আসিফ আলি জারদারির নাম প্রস্তাবের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়।

সূত্র: ডন, জিও নিউজ।

এসএস