দক্ষিণ কোরিয়ার জন্মহার ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশটির জন্মহার—  একজন নারী তার জীবদ্দশায় যতগুলো শিশুর জন্ম দেবেন— সেটি ২০২৩ সালে ০ দশমিক ৭২ শতাংশে এ নেমে গেছে। যা ২০২২ সালের তুলনায় ৮ শতাংশ কমেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার পরিসংখ্যান বিভাগের প্রাথমিক হিসাব-নিকাশ থেকে জানা গেছে এ তথ্য। বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা হলো ৫১ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ১০ লাখ। এই জনসংখ্যা ধরে রাখতে প্রতি নারীকে দুটি (২ দশমিক ১) শিশুর জন্ম দিতে হবে। বর্তমান হার এই প্রয়োজনীয়তা থেকে অনেক কম।

যদি জন্মহার এভাবে চলতে থাকে তাহলে ২১০০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা অর্ধেক কমে যাবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড এভালুয়েশন।

দক্ষিণ কোরিয়ার পরিসংখ্যান বিভাগের জনসংখ্যা জরিপ বিভাগের প্রধান লিম ইয়ং-ইল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে তাদের দেশে মাত্র ২ লাখ ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৯ হাজার ২০০ কম।

অপরদিকে প্রতি এক হাজার জনে জন্মহার ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। যেখানে ২০২২ সালে এটি ছিল ৪ দশমিক ৯।

নারীদের শিশু জন্মদানে উদ্বুদ্ধ করতে দক্ষিণ কোরিয়া কয়েকশ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। শিশু জন্ম দেওয়া মায়েদের নগদ অর্থ দেওয়ার মতো উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রতি বছর জন্মহার শুধু কমছেই।

পরিসংখ্যান বিভাগের জনসংখ্যা জরিপ বিভাগের প্রধান লিম ইয়ং-ইল আরও বলেছেন, “সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু, জন্মহার, প্রতি হাজারে জন্মহার সবকিছু ১৯৭০ সালের পর সবচেয়ে কম। ওই সময় জন্মহারের তথ্য লিপিবদ্ধ করা শুরু হয়।”

তিনি আরও জানিয়েছেন,ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্মহার সবচেয়ে কম।

এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় নারীদের জন্মদানের গড় বয়স হলো ৩৩ দশমিক ৬। এটিও ওইসিডিভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় কম জন্মহারের জন্য বেশ কয়েকটি বিষয় দায়ী। এরমধ্যে অন্যতম হলো শিশুদের লালন পালনের খরচ অনেক বেশি, সম্পদের দাম অনেক বেশি এবং সমাজ খুবই প্রতিদ্বন্বিতাপূর্ণ। এখানে একটি ভালো বেতনের চাকরি পেতে অনেক কষ্ট করতে হয়।

এছাড়া যেসব মা কাজ করেন তাদের শিশুদের লালন-পালন করার বিষয়টিও অনেক কঠিন হয়। এটিও কম জন্মহারের অন্যতম কারণ।

দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মহার কম হলেও; মানুষের আয়ুষ্কাল বেশি। ফলে দেশটিতে তরুণদের চেয়ে বয়স্কের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ বিষয়টি একটা সময় বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

সূত্র: এএফপি

এমটিআই