সফল চন্দ্র ও সৌর অভিযানের পর এবার মহাকাশে নিজেদের স্পেস স্টেশন নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো)। ইসরোর প্রধান গবেষক ও নির্বাহী এস সোমনাথ বলেছেন, সংস্থা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে এবং আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই প্রকল্প সাফল্য পাবে বলে আশা করছেন তিনি।

গত বছর ২৩ আগস্ট প্রথম ভারতীয় নভোযান হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে চন্দ্রযান তিন। উল্লেখ্য, ভারতের আগে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন— মাত্র এই ৩টি দেশ চন্দ্রাভিযানে সাফল্য পেলেও ভারতই প্রথম দেশ— যেটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে নভোযান পাঠাতে পেরেছে।

চন্দ্রযান ৩ চাঁদে অবতরণের মাত্র ১০ দিন পর ২ সেপ্টেম্বর সূর্যের কক্ষপথে নিজেদের নভোযান আদিত্য ১ পাঠায় ইসরো। সেই অভিযানেও সফল ইসরো।

পর পর দুই অভিযানে সাফল্যের পর ইসরোর সামনে নতুন লক্ষ্য দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই লক্ষ্য হলো আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে মহাকাশে ভারতের নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন স্থাপন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে এস সোমনাথ জানিয়েছেন, ইসরো ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত কাজ শুরু করেছে এবং নতুন সেই মহাকাশ স্টেশনটির নাম হবে ‘ভারতীয় অন্তরীক্ষ স্টেশন’। স্টেশনটি কেমন হবে— তার নকশাও প্রস্তুত করা হয়েছে। এনডিটিভিকে সেই নকশার গ্রাফিক্স সংস্করণ দেখিয়েছেন এস সোমনাথ।

স্টেশনটিতে কত জন নভোচারী অবস্থান করতে পারবেন— প্রশ্নের উত্তরে সোমনাথ বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে ২ থেকে ৪ জন নভোচারী সার্বক্ষণিকভাবে সেখানে থাকতে পারবেন, পরে স্টেশনের আকার আরও বড় করা হবে।’

প্রসঙ্গত, চন্দ্রাভিযানে সাফল্যের মতো মহাকাশে নিজেদের স্টেশন স্থাপনেও সক্ষম হয়েছে ৩টি দেশ— যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন। যদি নিজেদের স্পেস স্টেশন সেখানে স্থাপন করতে পারে, সেক্ষেত্রে চতুর্থ দেশ হিসেবে এই তালিকায় ঢুকবে ভারত।

ইসরোর প্রধান শাখা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নাম বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টার। ভারতের সর্বদক্ষিণের রাজ্য কেরালার রাজধানী থিরুভানান্থাপুরামে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ড. উন্নিকৃষ্ণান নায়ার এনডিটিভিকে বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে স্টেশনটির ওজন হবে ২০ জন। এটির কাঠামো হবে দৃঢ় এবং নিরেট, তবে হালকা খুচরা অংশও থাকবে। যদি আকার-আয়তন বৃদ্ধি করা হয়, সেক্ষেত্রে এটির সর্বোচ্চ ওজন পৌঁছাবে ৪০০ টনে।’

তিনি আরও জানান, স্টেশনটির সাজ-সরঞ্জাম মহাকাশে পৌঁছানোর কাজটি করবে ভারতের সবচেয়ে বড় ও ভারী রকেট ‘বাহুবলি’।

ইসরো প্রধান এস সোমনাথ জানিয়েছেন, মহাকাশ স্টেশনটির চারটি ভিন্ন মডিউল এবং আটটি সোলার প্যানেল থাকবে। সেই সঙ্গে স্টেশনটির এক প্রান্তে থাকবে ‘ডকিং পোর্ট’ নামের একটি এলাকা। নভোচারীরা রকেটে চেপে সেই মহাকাশ স্টেশনে গিয়ে ডকিং পোর্টে থামবেন। সেখান থেকেই তারা প্রবেশ করবেন স্টেশনের অভ্যন্তরে।

এই মহাকাশ স্টেশনের যাবতীয় কার্যক্রম ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে হবে বলে এনডিটিভিকে বলেছেন এস সোমনাথ।

সূত্র : এনডিটিভি

এসএমডব্লিউ