ন্যায়বিচার পাননি ভুট্টো : পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট
সামরিক শাসক জিয়া-উল-হকের শাসনামলে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিচার প্রক্রিয়া আইন মেনে পরিচালিত হয়নি। বুধবার পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি কাজী ফায়েজ ইসা এক রায়ে এ মন্তব্য করেছেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ ও সাক্ষ্য যাচাইয়ের পর সর্বোচ্চ আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীতি হয়েছে যে (জুলফিকার আলী ভুট্টোর) বিচারপ্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও আইনানুগ ছিল না।’
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭০ সালের যে পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ, সেই নির্বাচনে মোট প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে আওয়ামী লীগের পরে ছিল পিপিপি।
’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে ‘বাংলাদেশ’ নামে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, যার রাষ্ট্রপতি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সামরিক প্রশাসক হন জুলফিকার আলী ভুট্টো। বস্তুত পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র সামরিক প্রশাসক ছিলেন ভুট্টো, যিনি কখনও সামরিক বাহিনীতে চাকরি করেননি। পরে ১৯৭৩ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।
বিজ্ঞাপন
১৯৭৭ সালের এপ্রিলে সেনা বাহিনীর তিন তারকা জেনারেল জিয়া-উল-হককে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে মনোনীত করেন তিনি। এই পদে নিয়োগ পাওয়ার মাত্র চার মাসের মাথায় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতীয় ক্ষমতা দখল করেন জিয়া-উল-হক এবং ভুট্টোকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। বিচারের নামে দুই বছর কারা অন্তরীণ রাখার পর ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল ফাঁসি দেওয়া হয় ভুট্টোকে।
লাহোর হাইকোর্ট ভুট্টোকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন। পরে সুপ্রিম কোর্টও সেই আদেশ বহাল রাখেন। আদালত মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একাধিকবার এই দণ্ড কার্যকর না করতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল-হককে অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু জিয়া সেসব অনুরোধে কর্ণপাত করেননি।
ভুট্টোর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব এখন দিচ্ছেন তার নাতি বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। বুধবার প্রধান বিচারপতি রায় ঘোষণার পর তার প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বিলাওয়াল বলেন, ‘আজ সর্বোচ্চ আদালত যেসব কথা বলেছেন, সেসব শোনার জন্য আমাদের পরিবারের সদস্যরা তিন প্রজন্ম ধরে অপেক্ষা করছে।’
জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা বেনজির ভুট্টোর সাবেক সাবেক সহকারী এবং বর্তমানে লন্ডনপ্রবাসী রাজনীতি বিশ্লেষক ইউসুফ নজর বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে বলে আসছি যে বিচারের নামে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে হত্যার মাধ্যমে সামরিক শাসক জিয়া-উল-হক পাকিস্তানে ন্যায় বিচারের ভয়াবহ গর্ভপাত ঘটিয়েছিলেন। আজ সুপ্রিম কোর্ট একভাবে তা মেনে নিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
রায় ঘোষণার পর এক বার্তায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সুপ্রিম কোর্টের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, আদালতও নয়। আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে যে ভুল হয়েছিল, সর্বোচ্চ আদালত তা স্বীকার করেছেন এবং এমন ভুল যেন আর না হয়ে— সে পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আজকের দিনটি পাকিস্তানের ইতিহাসের একটি স্মরণীয় দিন।’
বুধবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি শিগগির প্রকাশ করা হবে।
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ