ওয়াই-ফাইতে ইউক্রেনপন্থি নাম, রাশিয়ায় শিক্ষার্থীকে কারাদণ্ড
মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রাবাস থেকে ওই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়
নিজের ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের নাম পরিবর্তন করে ইউক্রেনপন্থি নাম দিয়েছিলেন রাশিয়ার এক শিক্ষার্থী। আর এই অপরাধে তাকে কারাদণ্ড দিয়েছে রাশিয়ার একটি আদালত।
মূলত গ্রেপ্তারের একদিনের মাথায় তাকে এই দণ্ড দেওয়া হয়। রোববার (১০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিয়েভপন্থি স্লোগান দিয়ে নিজের ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের নাম পরিবর্তন করার দায়ে মস্কোতে একজন ছাত্রকে ১০ দিনের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র এবং তিনি তার ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কটির নাম দিয়েছিলেন ‘স্লাভা ইউক্রেনি!’, যার অর্থ ‘ইউক্রেনের গৌরব!’।
আর এই অপরাধেই গত বৃহস্পতিবার মস্কোর একটি আদালত তাকে ‘চরমপন্থি সংগঠনের প্রতীক’ প্রদর্শনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে।
বিজ্ঞাপন
বিবিসি বলছে, ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে রাশিয়ায় হাজার হাজারকে মানুষকে ইউক্রেন আক্রমণের সমালোচনা বা ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য জেল বা জরিমানা করা হয়েছে।
গত বুধবার সকালে মস্কোতে একজন পুলিশ অফিসার রুশ কর্তৃপক্ষকে নেটওয়ার্কের নাম জানানোর পরে ছাত্রটিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতের নথি অনুসারে, কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাসস্থানের মধ্যে তার কক্ষটি পরিদর্শন করেছেন এবং তার ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং একটি ওয়াই-ফাই রাউটার খুঁজে পেয়েছেন।
আদালত বলেছে, তিনি ওয়াই-ফাই রেঞ্জের মধ্যে সীমাহীন সংখ্যক ব্যবহারকারীর কাছে ‘স্লাভা ইউক্রেনি!’ স্লোগান প্রচার করতে নেটওয়ার্কটি ব্যবহার করেছিলেন। রাউটারটি এখন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
‘স্লাভা ইউক্রেনি’ শব্দটি ইউক্রেনের সমর্থকদের কাছে একটি জনপ্রিয় স্লোগান হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রাশিয়ার পূর্ণ-মাত্রায় আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নিয়মিত স্লোগান হিসেবে এটিকে ব্যবহার করা হয়।
বিবিসি বলছে, কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছাত্রটিকে ‘নাৎসি প্রতীকবাদের প্রকাশ্য প্রদর্শন... বা চরমপন্থি সংগঠনের প্রতীক’ এর জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার ইউক্রেনের বর্তমান সরকারকে একটি ‘নব্য-নাৎসি শাসন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং এটি বলেই ইউক্রেনে তার আক্রমণকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
অবশ্য দুই বছরের বেশি সময ধরে চলা এই সংঘাতকে রাশিয়ায় ‘যুদ্ধ’ বলাও অনুমোদিত নয়। এটিকে অবশ্যই ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসাবে উল্লেখ করতে হবে।
রাশিয়া অবশ্য ইউক্রেনে তার আগ্রাসনের সমালোচনাকারী ভিন্নমতের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের সমালোচনা করায় গত বছরের মার্চে এক শিক্ষার্থীকে সাড়ে ৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছিলেন এবং এর জেরেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
এছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনের নিন্দা করায় গত বছরের আগস্টে রুশ এক লেখককে ৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ওই লেখকের নাম দিমিত্রি গ্লুকভস্কি। তিনি রাশিয়ার একজন শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান কথাসাহিত্যিক।
এর আগে একই কারণে ২০২২ সালের আগস্টে একজন রাজনীতিককে আটক করেছিল রুশ কর্তৃপক্ষ। রুশ ওই রাজনীতিক ক্রেমলিনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, গত বছর ২১ হাজারেরও বেশি মানুষ রাশিয়ার এই ‘দমনমূলক আইনের’ লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন।
টিএম