রাস্তার ধারে এখানেই বোর্ডে লেখা আছে, কুপিয়ানস্ক স্বর্গ

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণ করে কুপিয়ানস্ক দখল করে নিয়েছিল রাশিয়া। পরে ইউক্রেনের বাহিনী তা আবার নিজেদের দখলে নেয়। রাশিয়া এখন আবারও কুপিয়ানস্ক দখল করে নিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

আর তাই তারা সেইমতো প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। খারকিভ থেকে দক্ষিণপূর্বে গেলে রাস্তার ধারে একটা সাইন দেখতে পাওয়া যায়, তাতে লেখা, ‘কুপিয়ানস্কি রাই’, এর মানে কুপিয়ানস্ক স্বর্গ। আগে এর সঙ্গে জেলা কথাটাও লেখা থাকত। এখন আর নেই।

ইউক্রেন আক্রমণের দিনকয়েক পরেই রাশিয়া এই শহর দখল করে নেয়। সেপ্টেম্বরে ইউক্রেন আবার তা দখল করে।

এই শহর হলো ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ রেল-হাব। শহরে এখন শুধু সামরিক বাহিনী ও তাদের যানবাহন চলাফেরা করছে। মাঠে চাষ হয় না। গ্রামগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। ‘স্বর্গ’ কথাটা শুধু ওই সাইনবোর্ডেই থেকে গেছে। বাস্তবে তার চেহারা বদলে গেছে।

শহরের কয়েক কিলোমিটার দূরেই এখন রাশিয়ার সেনাবাহিনী রয়েছে। তাদের নিক্ষেপ করা গোলা শহরে এসে পড়ছে। তাদের বিমান মাঝেমধ্যেই এখানে হামলা করছে। এই শহর তাদের মর্টারের রেঞ্জের মধ্যে এসে গেছে। দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে এখন এখানে তীব্র লড়াই হচ্ছে।

‘রাশিয়ার সেনাবাহিনী এলে পালাব’

এই শহর সাতমাস রাশিয়ার দখলে ছিল। এখন ইউক্রেনের সেনার হাতে উপযুক্ত পরিমাণে গোলাবারুদ নেই। ফলে আবার এই শহর রাশিয়া দখল করে নিতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রবল হয়েছে।

তাতিয়ানা পেশায় চিকিৎসক। কুপিয়ানস্ক হাসপাতালের সহ-অধিকর্তা। রাাশিয়া আক্রমণ তীব্র করার পরেও তিনি তার কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু এখন তিনি বলছেন, ‘রুশরা যদি এই শহর দখল করে, তাহলে আমি পালাব।’

আগেরবার রাশিয়া যখন শহর দখল করেছিল, তখন তারা সেখানেই ছিলেন। তখন তাতিয়ানা রুশদের সঙ্গে তর্ক করেছিলেন, তাদের নির্দেশ মানতে চাননি। আহত রুশ সেনার চিকিৎসা করতে চাননি। তাই এবার তাকে দেখলেই রাশিয়ার সেনাবাহিনী গুলি করে মারবে বলে তিনি মনে করেন।  

তাতিয়ানা এখনও আশা করছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী কুপিয়ানস্ক দখলে রাখতে পারবে। তবে হাসপাতালের অবস্থা এমনিতেই খুব খারাপ। আগে যে কর্মী ছিল, এখন তার পাঁচভাগের একভাগ আছে। দক্ষ কর্মীদের অভাব রয়েছে। সমানে গোলাগুলি চলছে। তাই শহরে যারা আছেন, তারা ভয় পাচ্ছেন।

‘জিনিস গোছানো আছে’

অ্যান্ড্রি কুজনিশেঙ্কো ঠিক করে নিয়েছেন রুশ সেনাবাহিনী শহর দখল করলে তিনি আর থাকবেন না। তার স্যুটকেস গোছানো আছে। এই তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষিকাও গতবার রুশ অধিকারের সময় রাশিয়ার সিলেবাস মেনে পড়াতে চাননি।

এখন অবশ্য তিনি বাড়িতেই থাকেন। কারণ, তার মাত্র দুইজন ছাত্রছাত্রী এখানে আছে। বাকিরা ইউক্রেন বা বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে গেছে।

তিনি ভিডিওর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়ান। এই শিক্ষিকা জানিয়েছেন, বাইরে থাকা ছাত্রছাত্রীরা মাঝেমধ্যে জানতে চায়, তাদের বাড়ি এখনও অক্ষত আছে কিনা। আর যদি রুশ সেনাবাহিনী এই শহর দখল করে, তাহলে স্যুটকেস নিয়ে তিনিও পালাবেন।

সাহায্যের হাত

যারা খারকিভ থেকে চলে যেতে চান, তাদের বিনা পয়সায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে ইউক্রেনের এনজিও  ‘রোস টু দ্য হ্যান্ড’। যে সব গ্রামে নিয়মিত গোলা এসে পড়ছে, বিদ্যুৎ নেই, সেখান থেকে বয়স্ক মানুষদের তারা অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে।

এরকমই দুজন হলেন নাদিয়া ও ভ্যালেন্টিনা। তাদের খারকিভে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে খাবার, বাসস্থান দেওয়া হয়েছে। সেখানে তাদের কোনও আত্মীয় নেই। কিন্তু তারা অন্তত গোলাগুলির মুখে আর নেই।

টিএম