নিজের ছেলেকে সামরিক বাহিনীর প্রধান বানিয়েছেন উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইয়োওয়েরি মুসেভেনি। তার ছেলের নাম জেনারেল মুহুজি কাইনেরুগাবা। এছাড়া কাইনেরুগাবাকে বছরের পর বছর পর ধরে দেশের শীর্ষ পদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গত শুক্রবার (২২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইয়োওয়েরি মুসেভেনি (৭৯) তার ছেলে জেনারেল মুহুজি কাইনেরুগাবাকে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছেন। পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির মন্ত্রিসভায় বড় রদবদলের মধ্যে ৪৯ বছর বয়সী এই জেনারেলের পদোন্নতি দেওয়া হলো।

মূলত মন্ত্রিসভায় সাম্প্রতিক বড় রদবদলের মধ্যে দেশটির পাঁচজন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

কাইনেরুগাবাকে বছরের পর বছর পর ধরে দেশের শীর্ষ পদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ১৯৮৬ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা মুসেভেনি তার একমাত্র পুত্রকে তার উত্তরসূরি হিসাবে তৈরি করার এই জল্পনাকে অস্বীকার করেছেন।

জেনারেল কাইনেরুগাবা একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। তিনি সামরিক প্রটোকল লঙ্ঘন করে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্রমশ জড়িত হয়ে পড়ছেন। ২০২২ সালে প্রতিবেশী কেনিয়া আক্রমণ করার জন্য টুইটারে হুমকি দেওয়ার পরে তাকে সেনাবাহিনীর স্থল বাহিনীর কমান্ডার পদ থেকে বরখাস্ত করেন তার বাবা।

সেই ঘটনায় প্রেসিডেন্ট মুসেভেনিও কেনিয়ার নেতার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং কেনিয়ানদের কাছে তার ছেলের পক্ষে ‘ক্ষমা’ প্রার্থনা করেছেন।

যদিও জেনারেল কাইনেরুগাবার সেই আপত্তিকর টুইটটি কখনোই সরানো হয়নি। পরে তাকে জেনারেল পদে উন্নীত করা হয় এবং তার বাবার উপদেষ্টা পদেও তাকে বহাল রাখা হয়েছিল। অবশ্য তিনি আগেও টুইটারে বিতর্কিত টুইট পোস্ট করেছেন।

সেখানে তিনি বলেছিলেন, তিনি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে রক্ষা করতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সহায়তা করার জন্য মস্কোতে সেনা পাঠাবেন।

এদিকে পদোন্নতির ফলে তিনি এখন দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল উইলসন এমবাদির স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। আর তার পূর্বসূরি উইলসন এমবাদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান হতে যাচ্ছেন।

রদবদলে জেনারেল কাইনেরুগাবার ঘনিষ্ঠ দুই উপদেষ্টাকেও মন্ত্রী হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি বলছে, জেনারেল কাইনেরুগাবার পদোন্নতির প্রতিক্রিয়া উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিরোধী আইনপ্রণেতা ইব্রাহিম সেমুজ্জু এনগান্ডা বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি উগান্ডাকে ‘তার পরিবারের ব্যক্তিগত বিষয়’ হিসাবে বিবেচনা করছেন।

তিনি এই নিয়োগের নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন, উগান্ডাবাসীদের ‘পারিবারিক রাজবংশের’ বিরোধিতা করা দরকার।

২০২১ সালের নির্বাচনের পর বিরোধীরা প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি, তার ছেলে এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও অপহরণের অভিযোগ এনেছিল। তবে প্রেসিডেন্টর মুখপাত্র এই দাবিগুলো অস্বীকার করেছেন এবং দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা ‘ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে’।

এছাড়া জেনারেল কাইনেরুগাবা বলেছেন, ২০২৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি। যদিও এক্সে দেওয়া ওই পোস্টটি পরে মুছে ফেলা হয়।

তিনি সম্প্রতি সমাবেশ করছেন এবং সারাদেশে সমর্থন জোগাড়ের কাজ করছেন। যা কিছু মহলে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছে।

টিএম