জাতীয় নির্বাচনের এক মাস আগে ভারতের একটি আদালত দেশটির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করেছে। শুক্রবার রাজ্যের এলাহাবাদ হাইকোর্ট মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে এই আদেশ জারি করেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এই রায়ের ফলে আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন হিন্দু-জাতীয়বাদী সরকারের সঙ্গে দেশটির মুসলিমদের দূরত্ব তৈরি হতে পারে।

উত্তরপ্রদেশে মাদ্রাসা পরিচালনা করা নিয়ে পাস করা ২০০৪ সালের একটি আইন শুক্রবার বাতিল করে দিয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, এই আইন ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির পরিপন্থি। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রচলিত স্কুল ব্যবস্থায় ফেরার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ইফতিখার আহমেদ জাভেদ বলেছেন, এলাহাবাদ হাইকোর্টের আদেশ রাজ্যের ২৫ হাজার মাদ্রাসার ২৭ লাখ শিক্ষার্থী ও ১০ হাজার শিক্ষকের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্যে ২৪ কোটি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে মুসলিম রয়েছেন প্রায় এক পঞ্চমাংশ।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের আইনজীবী অংশুমান সিং রাঠোরের মাদ্রাসা শিক্ষা নিষিদ্ধ চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে শুক্রবার আদালতের বিচারক ওই রায় দিয়েছেন। রায়ে আদালতের দুই বিচারক সুভাষ বিদ্যার্থী ও বিবেক চৌধুরী লিখেছেন, রাজ্য সরকারকে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী কোনও শিশু যেন যথাযথ স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া থেকে বাদ পড়ে না যায় 

আইনজীবী অংশুমান সিং রাঠোর দেশটির কোনও রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট কি না সেই বিষয়ে জানা যায়নি। এছাড়া এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগও করা যায়নি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

আগামী এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত ভারতে কয়েক ধাপে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আবারও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হতে যাচ্ছে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে এই রাজনৈতিক দলের কিছু সদস্য ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো ইসলাম-বিরোধী বক্তৃতা, গোরক্ষকদের কড়াকড়ি ও মুসলিমদের বাড়িঘর এবং অন্যান্য সম্পত্তি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটির মুসলিম ও সমাজকর্মীরা।

তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটিতে ধর্মীয় বৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিজেপি বলেছে, ষোড়শ শতকে নির্মিত একটি মসজিদ ১৯৯২ সালে ভেঙে ফেলার জায়গায় সম্প্রতি হিন্দু মন্দিরের উদ্বোধন করাসহ সরকার ঐতিহাসিক বিভিন্ন ধরনের ভুলের সংশোধন করছে।

দেশটির অনেক হিন্দু মনে করেন, উত্তরপ্রদেশের অযোদ্ধায় অবস্থিত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদটি তাদের দেবতা রামের জন্মস্থান ছিল। মুঘল সম্রাট বাবরের আমলে রামের জন্মস্থানের একটি মন্দির ভেঙে সেই জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।

বিজেপির উত্তরপ্রদেশ শাখার মুখপাত্র রাকেশ ত্রিপাঠি বলেছেন, তারা মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে নন। তবে তারা মুসলিম শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনও মাদ্রাসার বিরুদ্ধে নই। আমরা বৈষম্যমূলক চর্চার বিরুদ্ধে। আমরা অবৈধ অর্থায়নের বিরুদ্ধে। আদালতের আদেশের পর সরকার এই বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’’

আদালতের রায়ের বিষয়ে মন্তব্য জানতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয়ের কাছে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

এসএস