ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের উপকূলে গত সপ্তাহের নৌকাডুবির ঘটনায় কমপক্ষে ১১ জনের মরদেহ সাগর থেকে উদ্ধার করেছে দেশটির উপকূল রক্ষীবাহিনী। সোমবার তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ইন্দোনেশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দেড় শতাধিক রোহিঙ্গাকে নিয়ে ডুবে যাওয়া এই নৌকার আরও অনেকে নিখোঁজ আছেন।

শুক্রবার ডুবে যাওয়া নৌকার অন্তত ৭৫ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ইন্দোনেশিয়ার উপকূলরক্ষী বাহিনী। গত বুধবার আচেহ উপকূলের জেলেরা সাগরে ছয় রোহিঙ্গাকে ভাসতে দেখেন। পরে তাদের উদ্ধার করে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়। আচেহ উপকূলের জেলেদের একটি সম্প্রদায় বলছে, জোয়ারের কারণে ডুবে যাওয়া নৌকার পাটাতনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রোহিঙ্গারা।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমরা দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত হয়ে আসছেন। পাচারকারীরা প্রায়ই উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে সাগরপথে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া অথবা ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টা করে।

বছরের পর বছর ধরে এই রোহিঙ্গাদের অনেকে থাইল্যান্ড, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পালিয়েছেন। প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে এপ্রিল, সমুদ্র যখন কিছুটা শান্ত থাকে, সেই সময় রোহিঙ্গারা প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

স্থানীয় তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযানের প্রধান ফতুর রহমান ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, উপকূল থেকে ১৪ নটিক্যাল মাইল (২৬ কিলোমিটার) দূরে সাগরে মৃত অবস্থায় প্রায় অর্ধ ডজন রোহিঙ্গাকে পাওয়া গেছে। সোমবার বিকেলের দিকে টেলিফোনে এএফপিকে তিনি বলেন, ‘‘আজ আরও ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’’

‘‘উদ্ধারকৃতদের সবাই নারী। আমরা একজন জেলের কাছ থেকে মরদেহ ভাসতে থাকার তথ্য পেয়েছি। সবার মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে।’’

এর আগে সোমবার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, গত কয়েক দিনে আরও পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ইউএনএইচসিআর বলেছে, গত বছর ২ হাজার ৩০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছেন। যা আগের চার বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাটি জানায়, গত বছর মিয়ানমার কিংবা বাংলাদেশ থেকে পালাতে গিয়ে অন্তত ৫৬৯ জন রোহিঙ্গা মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন।

ইউএনএইচসিআরের এশিয়া অঞ্চলের মুখপাত্র বাবর বেলুচ শুক্রবার রয়টার্সকে বলেছিলেন, সর্বশেষ নৌকাটিতে ১৫১ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। তাদের মধ্যে ৭৫ জনকে আচেহ প্রদেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। বাকিরা ‘‘মৃত অথবা নিখোঁজ’’ বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

এসএস