পশ্চিম তীরে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর চেষ্টা করছে ইরান : ফাতাহ
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর চেষ্টা করছে ইরান, এমনই অভিযোগ করেছে ভূখণ্ডটির শাসক দল ফাতাহ। দলটি বলছে, তারা বাইরে থেকে এই ধরনের যেকোনও কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করবে।
বুধবার (৩ এপ্রিল) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিজ্ঞাপন
মূলত ফাতাহ হচ্ছে ফিলিস্তিনের বৃহত্তম ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল। একইসঙ্গে এই দলটি পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধান চালিকা শক্তি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর চেষ্টা করার জন্য বুধবার ইরানকে অভিযুক্ত করেছে ভূখণ্ডটির প্রধান ফিলিস্তিনি উপদল ফাতাহ। দলটি বলেছে, তারা বাইরে থেকে এমন যেকোনও কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করবে যার সাথে ফিলিস্তিনি উদ্দেশ্যের কোনো সম্পর্ক নেই।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে নিয়ন্ত্রণকারী ফাতাহ আন্দোলন বলেছে, ‘আমাদের পবিত্র উদ্দেশ্য এবং আমাদের জনগণের রক্তকে শোষণ করার অনুমতি ফাতাহ দেবে না’। তারা আরও বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনী বা জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার লক্ষ্যে বাইরে থেকে কোনো হস্তক্ষেপ করা হলে তার বিরুদ্ধে কাজ করবে তারা।
রয়টার্স বলছে, হামাসসহ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে ইরান সাহায্য করছে বলে ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে। গাজার ক্ষমতাসীন এই দলটি গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিম তীরে আরও গভীরভাবে প্রবেশ করেছে হামাস।
গত মাসে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছিল, পশ্চিম তীরে ট্যাংক-বিধ্বংসী মাইন-সহ উন্নত অস্ত্র পাচার হওয়া ঠেকিয়ে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। অবশ্য অতীতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেনি ইরান। দেশটি বলেছে, তারা যা কিছু সমর্থন দেয় তা ফিলিস্তিনিদের অনুরোধেই দিয়ে থাকে।
রয়টার্স বলছে, ফাতাহের এই বিবৃতিটি এমন এক সময়ে সামনে এসেছে যখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা পরিষদকে এই মাসে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য করার জন্য ভোট দিতে আহ্বান জানিয়েছে। আর এটি এমন একটি পদক্ষেপ যা দুই রাষ্ট্র সমাধানের জন্য ইসরায়েলের ওপর বিশ্বব্যাপী চাপ বাড়াবে।
মূলত ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করে নেয় এবং এরপর থেকেই পশ্চিম তীর ফিলিস্তিনিদের সাথে ইসরায়েলের কয়েক দশক ধরে চলমান সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ফিলিস্তিনিরা এই অঞ্চলটিকে তাদের ভবিষ্যত স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে চায় এবং এতে গাজা ভূখণ্ডও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আর সেই রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেমকে চায় ফিলিস্তিনিরা।
গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আরও হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে। আগ্রাসনের জেরে এই অঞ্চলজুড়ে সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে, ফিলিস্তিনিদের হামলায় এক ডজনেরও বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।
আরও পড়ুন
উল্লেখ্য, ফাতাহ হলো প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্টের আরবি অনুবাদের বিপরীত সংক্ষিপ্ত রূপ এবং ফিলিস্তিনের বৃহত্তম ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল। এই দলটি পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধান চালিকা শক্তি।
১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের ঠিক এক দশক পর ১৯৫৯ সালে ফিলিস্তিনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতসহ সেখানকার আন্দোলন কর্মীদের নিয়ে গঠিত হয় পিএলও। শুরুর দিকে ফাতাহ সশস্ত্র উপায়ে ইসরায়েলি সরকারের বিরোধিতা করলেও পরে দলটি ১৯৮০-এর দশকে কূটনৈতিক উপায়ে সংকট সমাধানের চেষ্টা করে।
যা শেষ পর্যন্ত অসলো চুক্তিতে গড়ায় অর্থাৎ ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল হামাস।
টিএম