টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ আগ্রাসন বন্ধের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

এই পরিস্থিতিতে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে একে অপরের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ। এমনকি ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র ‘একসাথে শক্তিশালী’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে একে অপরের প্রয়োজন এবং (ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র) ‘একসাথে শক্তিশালী’ বলে মন্তব্য করেছেন ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ। মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক এই জোটের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে নিরাপত্তা দিলেও ওয়াশিংটনেরও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সামরিক, গোয়েন্দা এবং কূটনৈতিক সুবিধার প্রয়োজন রয়েছে। স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘আমি একা আমেরিকাতে বিশ্বাস করি না ঠিক যেমন আমি একা ইউরোপেও বিশ্বাস করি না।

তার ভাষায়, ‘আমি ন্যাটোতে আমেরিকা এবং ইউরোপ একসাথে বিশ্বাস করি, কারণ আমরা একসাথে শক্তিশালী এবং নিরাপদ।’

বিবিসি বলছে, ন্যাটো প্রধানের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন সামরিক এই জোটটি ইউক্রেনে দীর্ঘমেয়াদী সামরিক সহায়তা প্রদানের জন্য পাঁচ বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল বিবেচনা করছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর সদস্য অন্য কোনও দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে কিয়েভকে সাহায্য করা ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে।

বক্তৃতার সময় স্টলটেনবার্গ বলেন, ন্যাটো অবশ্যই ‘সঠিক কিছু করছে’, নিজেদের সূচনাকালে এই জোটটিতে ১২টি দেশ থাকলেও বর্তমানে তা ৩২টিতে উন্নীত হয়েছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড তাদের দীর্ঘদিনের নিরপেক্ষতা পরিত্যাগ করেছে এবং ন্যাটো জোটে নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়া এবং ন্যাটোর মধ্যে সম্পর্ক ‘সরাসরি সংঘর্ষের পর্যায়ে চলে গেছে’। কারণ সামরিক এই জোটটি ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের চারপাশে সংঘাতে ‘জড়িত’ রয়েছে।

যদিও ন্যাটো একটি প্রতিরক্ষামূলক জোট, তারপরও পেসকভ অভিযোগ করেছেন, ‘সংঘাতের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই জোট গঠনের ধারণা সামনে এনেছিল। পরে জোটটি সজ্জিত করা, তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র’ এবং বর্তমানে এটি একটি ‘অস্থিতিশীল উপাদান’।

এদিকে ৩২ সদস্যের এই জোট ইউক্রেনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সামরিক সহায়তার পরিকল্পনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশ শুধুমাত্র তত্ত্বগতভাবে এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছে।

তবে রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলা হাঙ্গেরি সতর্ক করেছে, তারা ‘ন্যাটোর এমন কোনো প্রস্তাবকে সমর্থন করবে না যা জোটটিকে যুদ্ধের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে বা এটিকে প্রতিরক্ষামূলক থেকে আক্রমণাত্মক জোটে রূপান্তরিত করতে পারে’।

এছাড়া হাঙ্গেরিয়ান সরকার দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ে অর্থায়নের জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেয়েছে এবং কিছু সময়ের জন্য ইউক্রেনের জন্য ৫০ বিলিয়ন ইউরোর সহায়তা প্যাকেজ প্রদানে ইইউয়ের পরিকল্পনাও অবরুদ্ধ করেছে।

স্টলটেনবার্গ স্বীকার করেছেন, (ইউক্রেনকে) সমর্থনের কাঠামোর বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই নীতিতে একমত হয়েছেন: ‘(তারা) কোনও ভুল করবেন না, ইউক্রেন এখন এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য ন্যাটো সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে পারে।’

টিএম