টানা কয়েকদিন সংঘাতের পর সামরিক বাহিনীর প্রায় ২০০ সেনাকে হটিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী শহর মায়াবতির দখল নিয়েছে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর যোদ্ধারা। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক জোট ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (নাগ) মুখপাত্র কিয়াও জাও।

কিয়াও জানান, কারেন প্রদেশভিত্তিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিটির (কেএনইউ) নেতৃত্বাধীন একটি যোদ্ধা বাহিনী বুধবার থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী মায়াবতি শহরের প্রধান সামরিক ঘাঁটি দখল করেছে। ঘাঁটিটি দখলের সময় সেখানে ২০০ জন সেনা সদস্য ও কর্মকর্তা ছিল। সবাই পিছু হটেছেন।

একটি সামরিক বাহিনী শাসিত দেশ মিয়ানমারে সরকারি প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করেন সামরিক কর্মকর্তারা। তাই মায়াবতির প্রধান সামরিক ঘাঁটি দখলের অর্থ প্রকারান্তরে শহরটিরই দখল নেওয়া।

কিয়াও আরও জানিয়েছেন, কেএনইউ’র নেতৃত্বে যে বাহিনী সামরিক ঘাঁটি দখল করেছে, সেখানে কেএনইউ ছাড়াও অন্যান্য জান্তাবিরোধী গোষ্ঠীর সদস্যরা ছিলেন।

জান্তাবিরোধী জোটের জন্য এই বিজয় কৌশলগতভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মায়াবতি শহরের সীমান্তের ওপারেই থাই শহর মায়ে সোট। এর আগে বাংলাদেশ, চীন এবং ভারতের সীমান্তবর্তী শহরগুলোর দখল নিলেও এই প্রথম থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী কোনো শহরের পূর্ণ দখল নিলো নাগ।

২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এই অভুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ক্ষমতা দখলের পর গঠিত সামরিক সরকারের প্রধানও হন তিনি।

অভ্যুত্থানের সময়েই বন্দি করা হয়েছিল অং সান সুচি, তার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং তার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি’র (এনএলডি) হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি জনগণ প্রথম দিকে ব্যাপক আকারে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেছিলেন, কিন্তু প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে সেসব বিক্ষোভ দমন করেছে সামরিক সরকার।

তবে তার পর থেকে গণতন্ত্রপন্থি জনগণের একটি অংশ যোগ দিতে শুরু করেন সামরিক বাহিনী বিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীতে। গত বছর অক্টোবর থেকে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী একযোগে হামলা শুরু করে সামরিক বাহিনীর ওপর। এখনও সেই সংঘাত চলছে এবং ইতোমধ্যে দেশটির প্রায় ১০ শতাংশ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো।

মায়াবতি শহরের দখল হারানো নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে জান্তা মুখপাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু কোনো মুখপাত্র কথা বলতে রাজি হননি। তবে দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষক থান সোয়ে নাইং বলেছেন, ‘বর্তমানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্য সীমান্তবর্তী শহরগুলো দখল করে সীমান্ত বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেওয়া। মায়াবতি দখলের মধ্যে দিয়ে সেই লক্ষ্য একপ্রকার পূর্ণ হয়েছে।’

‘আমার ধারণা, এখন তারা মিয়ানমারের বড় শহরগুলোর দখল নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবে।’

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ