রিগলিং ক্রিটার্স

বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে নতুন আশা নিয়ে এসেছে রিগলিং ক্রিটার্স নামের একপ্রকার কীট। এই কীটটি প্লাস্টিক খেয়ে হজম করে ফেলতে সক্ষম।

প্লাস্টিক প্রায় ‘অবিনশ্বর’। এই ‘অবিনশ্বরতার উৎস এটির প্রধান উপাদান পলিথিলিন। প্লাস্টিকের তৈরি যে কোনো উপাদান পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে প্রকৃতিতে মিশে যেতে শত শত, এমন কি হাজার হাজার বছরও লেগে যায়। দৈনন্দিন জীবন থেকে শিল্পখাত— বিশ্বের সব জায়গায় প্রতিদিন বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার।

তবে যে হারে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে, অপচনশীল হওয়ায় সেসব ধ্বংস হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন পৃথিবীতে জমা হচ্ছে টনকে টন ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য। জমতে থাকা এসব প্লাস্টিক পণ্য-পলিথিন একদিকে যেমন মাটির উর্বরাশক্তি নষ্ট করছে, অন্যদিকে প্রাণ-প্রকৃতি ও মানুষের স্বাস্থ্যকেও হুমকির মুখে ফেলছে।

ক্রমবর্ধমান এই দূষণ প্রতিরোধে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে অনেক দেশ।

রিগলিং ক্রিটার্সের নামের এই কীটের প্রথম খাবার মৌমাছিরা নিজেদের দেহের যে উপাদান ব্যবহার করে চাক তৈরি করে— সেই মোম। এ কারণে মৌমাছি এবং মৌচাষীদের জন্য এই পোকা রীতিমতো আতঙ্ক। তবে এই কীটটি যে মোম না পেলে দিব্যি প্লাস্টিক খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে এবং হজমও করতে পারে— তা আবিষ্কারের কৃতিত্ব স্পেনের আণবিক জীববিজ্ঞানি (মলিকিউলার বায়োলজিস্ট) ফেডেরিকা বের্তোচিনির।

স্পেনের শীর্ষ স্থানীয় গবেষণা সংস্থা স্প্যানিশ ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলে গবেষক হিসেবে কর্মরত ফেডেরিকা একজন শখের মৌচাষী। স্পেনে নিজের বাসভবনে কয়েকটি মৌচাক ছিল তার।

২০১৭ সালের কোনো এক দিন একটি মৌচাকে বেশ কিছু রিগলিং ক্রিটার্স দেখতে পেয়ে সেগুলো পরিষ্কার করে একটি প্লাস্টিকের ক্যানে রেখেছিলেন ফেডেরিকা। কিছুক্ষণ পর তিনি দেখেন, সেই ক্যান ফুটো করে ফেলেছে কীটগুলো।  

কীটগুলোর প্লাস্টিক খাওয়ার জন্যই এসব ফুটো তৈরি হয়েছে কি না নিশ্চিত হতে কীটগুলোর মুখ বা শোষক অঙ্গের সামনে প্লাস্টিকের ‍টুকরো ধরে পরীক্ষা করেন ফেডেরিকা এবং দেখেন, সেগুলো প্লাস্টিক খাচ্ছে।

‘সেটি ছিল একটি অসাধারণ…‘ইউরেকা’ মুহূর্ত এবং বলা যায়— নতুন একটি গবেষনা প্রকল্প এবং তার পর যা যা হয়েছে— সেসবের শুরুর গল্পের প্রথম মুহূর্ত। যে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধের কার্যকর তেমন কোনো সমাধান না থাকায় বিশ্ব উদ্বিগ্ন, সেই উদ্বেগ দূর করে দিচ্ছে এক প্রজাতির কীট,’ বিবিসিকে বলেন ফেডেরিকা বের্তোচিনি।

ফেডেরিকা জানান, এর পরেই তিনি এ বিষয়ে বিস্তৃত গবেষণার সিদ্ধান্ত নেন। রিসার্চ কাউন্সিলের সহকর্মীদের এ ঘটনা জানানোর পর তারাও খুব উৎসাহের সঙ্গে তাকে সহযোগিতা করতে রাজি হন। গবেষণার প্রথম পর্যায়ে কীটটির লালা সংগ্রহ করেন তারা। তারপর সেটি পরীক্ষা করে দেখতে পান— রিগলিং ক্রিটার্সের লালায় সেরেস ও ডিমেটার নামের দু’টি জটিল এনজাইম রয়েছে। এই এনজাইমগুলোতে থাকা রাসায়নিক প্লস্টিকের মূল উপাদান পলিথিলিনের গঠনচক্র ভেঙে চুরে গলিয়ে দিতে সক্ষম।

বর্তমানে জৈব উপাদান গবেষণা সংক্রান্ত ফরাসি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিকেন্ট্রোপি ফ্রান্সের শীর্ষ গবেষণা কর্মকর্তার পদে রয়েছেন ফেডেরিকা বের্তোচিনি। এই প্রতিষ্ঠানটি কৃত্রিমভাবে সেরেস এবং ডিমেটার উৎপাদনের জন্য কাজ করছে।’

‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য বিশ্ব থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য দূর করা। এক্ষেত্রে এই দু’টি এনজাইম যদি ব্যাপক আকারে ব্যবহার করা হয়, তাহলে পুরো দৃশ্যপট বদলে যাবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’

সূত্র : বিবিসি

এসএমডব্লিউ