পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপর্যয়ের কারণ জানতে চেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতা ও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির অন্যতম নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়।

রোববার সাংবাদিকদের কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘ভোটের ফল এমন হলো কী করে, তা জানতে চেয়েছেন অমিত শাহ। পূর্ণাঙ্গ ফল মেলার পর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টি পর্যালোচনা করবে বলে জানান তিনি।’

‘এই বার, ২০০ পার’ স্লোগান নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তবে নির্বাচনের ভোট গণনার প্রথম পর্বে সেই স্লোগানের বদলে বিজেপি কার্যত ১০০ আসন পার হওয়া নিয়ে ভাবছে।

ভোটের সর্বশেষ ফলাফলে দেখা গেছে, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ২০৪ টিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি জয় পেয়েছে ৮৪ টি আসনে।

অর্থাৎ, একশ আসনেও জয়ী হতে পারেনি বিজেপি। এমনকি নির্বাচনকে ঘিরে যারা তৃণমূল ও অন্যান্য দল থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই জিততে পারেননি।

এবারের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকে আলাদা গুরত্ব দিয়েছিল বিজেপি। মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেছিল বিধানসভা নিজেদের দখলে আনতে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা অমিত শাহ ভোটের আগে পরে একাধিক বার স্লোগান দিয়েছেন, ‘২০১৯ মে হাফ, ২০২১ মে সাফ’।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে আশাতীত সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৮টিতেই জয়ী হয়েছিল পদ্মশিবির। সেই জয় থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই এবারের নির্বাচনে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়েছিল পদ্ম শিবির।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, প্রথম থেকেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব রাজ্যের হাত থেকে নিয়ে নিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কোন এলাকায় দল কেমন অবস্থায় রয়েছে তা দেখতে ৫ জন কেন্দ্রীয় নেতার হাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বিধানসভার দখল পেতে একের পর এক কর্মসূচি করে গেছে পদ্ম শিবির। কৃষক সুরক্ষা যাত্রা থেকে কৃষকদের সঙ্গে ‘একসঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার’ মতো কর্মসূচির পর কর্মসূচি পরিচালনা করেছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

কিন্তু এসবে যে তেমন লাভ হয়নি, রোববারের ফলাফলে তা স্পষ্ট। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির অনেক নেতাও দলের কেন্দ্রীয় নেতেৃত্বের এই ‘বাড়াবাড়ি’ ভালো চোখে দেখেনি।

তাদের অভিযোগ— এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সাংগঠনিক কাজে গুরুত্ব কম দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময় এক নেতা বলেছিলেন, ‘আমরা জিতলে রাজ্যের সংগঠনের জোরেই জিতব। আর হারলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডের জন্য।’

রোববার নির্বাচনি ফলাফলের প্রাথমিক ধারণা সামনে আসার পরপরই রাজ্য বিজেপি নেতাদের সেই অভিযোগ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির এক শীর্ষ নেতা ইতোমধ্যে বলেছেন, ‘জেলায় জেলায় অন্য রাজ্য থেকে আসা পর্যবেক্ষকরা স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি অবিশ্বাস দেখিয়েছেন। বাংলার রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও নিজেদের রাজ্যের অভিজ্ঞতা বাংলায় প্রয়োগ করতে চেয়েছেন। বারবার বলেও কাজ হয়নি। যে ফল হতে চলেছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, সেটা ঠিক হয়নি।’

এসএমডব্লিউ/জেএস