করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারত। বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হলেও মহামারি শুরুর পর থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পার করছে প্রতিবেশী এই দেশটি।

দৈনিক প্রায় চার হাজার মৃত্যু ও প্রায় চার লাখ নতুন সংক্রমণ দেখছে ভারত। চিকিৎসা সেবায় সংকটের পাশাপাশি চলছে টিকার তীব্র সংকট। এ কারণে দিন যতই যাচ্ছে, ততই কমছে টিকাদানের গতি।

করোনা মহামারির এই খারাপ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ভারতে টিকাদানের হার বাড়ানোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, দিনের পর দিন টিকাদানের গতি কেবলই কমছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ২ কোটি ৪৮ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মাত্র ১ কোটি ৪৮ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মাসের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় শেষ সপ্তাহে টিকাদান কমেছে ৪০ শতাংশ। মে মাসের শুরুতে এই পরিসংখ্যান আরও কমেছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে টিকার অভাবের কারণে প্রয়োগ কম হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের এই বক্তব্য মানতে নারাজ ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের বক্তব্য, বিভিন্ন এলাকায় চলাফেরায় বিধিনিষেধের ফলে টিকার প্রয়োগ কম হচ্ছে।

তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করছেন মোদি সরকারের বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, গত ১ মে থেকে কাগজে-কলমে ৪৫ বছরের কম বয়সীদের টিকা দেওয়া শুরু হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১২টি রাজ্যে সেটা পাওয়া যাচ্ছে। যা দেশটির মোট রাজ্যের অর্ধেকেরও কম।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গত ১ মে থেকে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত এই বয়সসীমার মাত্র ৬ লাখ ৬২ হাজার মানুষ প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন। এর অর্থ, ১২টি রাজ্যে টিকাদান শুরু হলেও সেসব রাজ্যের অধিকাংশ জায়গায় নেই কোনো টিকা। যার কারণে ক্রমেই কমছে টিকাদানের হার।

ভারতে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে একযোগে সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশটি কেবল চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশসহ করোনা মোকাবিলায় সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কাজ করা মানুষকে টিকা প্রয়োগ করে। পরে ধীরে ধীরে এটি আরও উন্মুক্ত করা হয়।

সর্বশেষ গত ১ মে থেকে দেশটিতে ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের টিকার আওতায় আনে মোদি সরকার। কিন্তু পর্যাপ্ত টিকার অভাবে এই কর্মসূচি পরিচালনায় রীতিমতো চ্যলেঞ্জের মুখে পড়েছে দেশটি।

বুধবার (৫ মে) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ জানুয়ারি থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৬ কোটি ৪ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৮ ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ লাখ ৮২ হাজার ৩১৫ জন। সর্বশেষ এই পরিসংখ্যান নিয়ে মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৪৮ জনে।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩ হাজার ৭৮০ জন। এতে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ১৮৮ জনে।

টিএম