বাড়িতে থাকা করোনা রোগীদের জন্য এআইআইএমএসের পরামর্শ
করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে থাকা (হোম আইসোলেশন) করোনা রোগীদের জন্য গাইডলাইন দিয়েছে চিকিৎসা ও এ সংক্রান্ত গবেষণা বিষয়ক ভারতের সর্বোচ্চ সরকারি প্রতিষ্ঠান অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস)। আইসোলেশনে থাকাকালে কী কী করণীয়, তা ও বলা হয়েছে গাইডলাইনে।
যাদের জন্য প্রযোজ্য হোম আইসোলেশন
কেবল মৃদু উপসর্গের করোনা রোগীদেরই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়া বা হোম আইসোলেশনের পরামর্শ দেওয়া হয়। শ্বাসনালীর ওপরের ভাগে সমস্যা বা শ্বাসকষ্টের কোনও অসুবিধা না হলে সেই রোগী হোম আইসোলেশনের যোগ্য। তবে কার করোনা উপসর্গ মৃদু ও কার প্রকট, তা চিকিৎসকই ঠিক করবেন।
বিজ্ঞাপন
হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের পরামর্শ
১. হোম আইসোলেশনে রোগীর ক্ষেত্রে ঘরের সঙ্গে বাথরুম থাকা আবশ্যিক। কোনও কারণে তা না থাকলে রোগীর জন্য আলাদা বাথরুম রাখতে হবে।
২. HIV পজিটিভ রোগীদের জন্য সাধারণত হোম আইসোলেশেনে থাকার উপদেশ দেওয়া হয় না। শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম থাকায় তাঁদের বাড়িতে রাখাটা ঝুঁকির। তবে চিকিৎসক বললে অবশ্যই তাঁদের বাড়িতে রাখা যেতে পারে।
বিজ্ঞাপন
৩. প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে বয়সজনিত শারীরিক সমস্যা বা অন্যান্য রোগ চিন্তার কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শেই কোভিড রোগীকে বাড়িতে রাখার পরামর্শ দেওয়া উচিত। তবে তাঁর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা কোনও নার্স রাখা জরুরি।
৪. প্রবীণ নাগরিকদের হোম আইসোলেশনে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতে হবে নার্সকে। নিয়ম মেনে আপডেট দিতে হবে 'ট্রিটিং ফিজিশিয়ান'কে। কোভিডের চিকিৎসার পাশাপাশি অন্যান্য রোগের ওষুধও খাইয়ে যেতে হবে নার্সকে।
৫. রোগীর শরীরে যেন পানির পরিমাণ কমে না যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি মনে রাখত হবে, এইসব রোগীর ক্ষেত্রে ঘুম একটি জরুরি ব্যাপার।
৬. নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পালস অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রায় নজর রাখা আবশ্যিক। কোনওভাবে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৪ শতাংশের কম হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
৭. পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে রোগীকে। নির্দিষ্ট ঘরের মধ্যেই থাকতে হবে তাকে। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিক ও কোমর্বিডিটি রয়েছে এরকম পরিবারের সদস্যদের থেকে দূরে রাখতে হবে করোনায় আক্রান্ত রোগীকে।
৮. রোগীকে হোম আইসোলেশনের সময় অবশ্যই পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করে সেরকম ঘরে থাকতে হবে। ওই নির্দিষ্ট ঘরে সব সময় জানালা খোলা রাখতে হবে। যাতে সব সময় আলো-বাতাস আসে।
৯. হোম আইসোলেশনে থাকাকালীন রোগীকে সর্বদা ত্রিস্তরীয় মেডিক্যাল মাস্ক পরে থাকতে হবে। প্রতি ৮ ঘণ্টা অন্তর বা তার আগে ভিজে গেলে এই মাস্ক বদলে ফেলতে হবে রোগীকে।
১০. রোগী ঘরের যেই জায়গা স্পর্শ করছে সেগুলি ফিনাইল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। যেমন টেবিল, চেয়ার, দরজার হাতল ইত্যাদি। সাধারণ স্যানিটাইজার দিয়ে এই জায়গাগুলো পরিষ্কার করে কোনও লাভ হবে না।
১১. রোগীকে নিজের ঘরে খাবার দিতে হবে। খাওয়ার পর রোগীর বাসন ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
১২. হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীর জন্য নিয়ম করে দিনে দুই বার গরম পানিতে কুলকুচো (গার্গল) ও উষ্ণ গরম পানির ভাপ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
১৩. বাড়িতে থাকার সময়ে ভিটামিন সি ও জিঙ্ক ট্যাবলেট নিতে পারেন রোগী।
১৪. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনওভাবেই হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীকে রেমডিসিভির দেওয়া যাবে না।
১৫. ১০দিন কোনও উপসর্গ দেখা না দিলে হোম আইসোলেশন পর্ব ত্যাগ করতে পারেন রোগী। টানা তিন দিন জ্বর না এলেও এই কাজ করা যাবে। একবার হোম আইসোলেশন পর্ব শেষ হলে করোনা পরীক্ষা করার কোনো প্রয়োজন নেই।
এআইআইএমএসের সহকারী অধ্যাপক ও পালমোনারি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও স্লিপ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সৌরভ মিত্তাল বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনে হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মানা হলে তা একদিকে যেমন দেশব্যাপি করোনা সংক্রমণ রুখতে কাজে আসবে; অন্যদিকে হাসপাতালের ওপর চাম কমাতেও বড় ভূমিকা রাখবে।
এসএমডব্লিউ