ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার সকালেও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে টানা তিন দিন সেখানে হামলা চালানো হলো। তিন দিন ধরে চলা হামলায় এ পর্যন্ত ২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭ শতাধিক।

আল-আকসা থেকে সেনা সরানোর আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পর গত শনিবার গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরই পবিত্র আল-আকসা মসজিদে শবে-কদরের রাতে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর ইসরায়েলি সেনারা হামলা চালায়। ওই দিন রাতেই নিহত হন অন্তত ৯ ফিলিস্তিনি। এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে। 

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালের এই হামলার আগে ইসরায়েলি সেনারা সোমবার রাতভর গাজা উপত্যকায় হামলা চালায়। এতে এ পর্যন্ত ২৬ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ৯ শিশু রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো দুই পক্ষকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তুরস্ক ও সৌদিসহ কিছু দেশ ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।  

পূর্ব জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা ও অগ্নিকাণ্ড শুরুর পর গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস আল-আকসা থেকে সেনা সরানোর জন্য ইসরায়েলকে আল্টিমেটাম দিয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েল তা না মানায় হামাস পূর্ব জেরুজালেমে রকেট হামলা শুরু করে। পরে ইসরায়েল অবরুদ্ধ করে রাখা গাজা উপত্যকায় বিমান দিয়ে বোমা হামলা শুরু করে। হামলায় সাত শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।

গতকাল সোমবার তৃতীয় দিনের মতো ইসরায়েলি পুলিশ আল-আকসা মসজিদ ও তার আশপাশের এলাকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা শুরু করে। ফিলিস্তিনিরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা করলে ইসায়েলি পুলিশ আরও চড়াও হয়। এতে পরিস্থিতি সহিংস আকার নেয়। 

এদিকে, একই দিন আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আল জাজিরা জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট অগ্নিশিখা এত বড় ও উজ্জ্বল ছিল যে, পূর্ব জেরুজালেমের শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেখা গেছে সেই আগুনের শিখা। আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি সহিংসতায় সাত শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে।

শনিবার ইসলাম ধর্মের পবিত্র রাত লাইলাতুল কদর উপলক্ষে হাজার হাজার মুসলমান আল-আকসা মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসেন। এদিন মসজিদ অভিমুখে মুসল্লিদের অনেক বাস আটকে দেয় ইসরায়েলি পুলিশ। এতে ফিলিস্তিনিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা মসজিদ প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ করেন।

সহিংসতার নেপথ্যে

১৯৬৭ সালে যুদ্ধের পর থেকে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। গোটা শহরকে তারা নিজেদের রাজধানী বলে মনে করে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ দেশ তাতে স্বীকৃতি দেয়নি। ফিলিস্তিনিদের দাবি, পূর্ব জেরুজালেম স্বাধীন ফিলিস্তিনের রাজধানী।

সেখানে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। কারণ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের জন্য পূর্ব জেরুজালেমের বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার শঙ্কা দিন দিন আরও জোরালো হচ্ছে। ফলে বাস্তুভিটা রক্ষায় নিজেদের সাধ্যমতো প্রতিরোধের চেষ্টা করছে ফিলিস্তিনিরা।

জাতিসংঘ ইসরায়েলের প্রতি আহবান জানিয়েছে, যেন যে কোনো ধরনের উচ্ছেদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হয় এবং ‘বিক্ষোভকারীদের প্রতি যেন সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানো হয়’। ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার যে কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানিয়েছে আরব দেশগুলোর জোট আরব লীগ। তারপরও ইসরায়েলের উচ্ছেদ অভিযান থেমে নেই। 

এএস/জেএস