টিকা সরবরাহের সংক্রান্ত চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ব্রিটেন ও সুইডেনভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পনি অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে আর একটি মামলা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মঙ্গলবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের একটি আদালতে মামলাটি দায়ের করে ইইউ।

তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দাবি, ইইউর অভিযোগ ভিত্তিহীন; কারণ কোম্পানি চুক্তির কোনো শর্ত ভঙ্গ করেনি।

মঙ্গলবার ইইউ মুখপাত্র স্টেফান ডি কিরসমেকার ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে ইইউর অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, ‘আগামী জুনের মধ্যে আমাদের ১২ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন। আমরা চাই, মাননীয় আদালত যেন অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে এই নির্দেশ দেন, এবার যেন টিকার ডোজ সরবরাহে কোনো গাফিলতি বা বিলম্ব না হয়।’

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, মঙ্গলবার ব্রাসেলসের আদালতে মামলার শুনানিতে আদালতের উদ্দেশে একই কথা বলেছেন ইইউর আইনজীবী রাফায়েল জাফেরালি।

তিনি আর্জি জানিয়েছেন— আদালত যেন অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে আগামী জুন মাস শেষ হওয়ার আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ১২ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের আদেশ দেন।

ইইউ সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সরবরাহ সংক্রান্ত চুক্তির শর্তানুযায়ী, গত ডিসেম্বর থেকে আগামী জুন শেষ হওয়ার আগে ইইউকে ৩০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের কথা ছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার।

তবে গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকা ইইউকে সরবরাহ করতে পেরেছে মাত্র ৫ কোটি ডোজ টিকা। চুক্তির শর্তানুযায়ী এই পরিমাণ টিকা গত জানুয়ারি শেষ হওয়ার আগেই সরবরাহ করার কথা ছিল।

আদালতে ইইউর আইনজীবী বলেন, টিকা সরবরাহে বিলম্বের কারণে অ্যাস্ট্রাজেনেকার উচিত আংশিক ও তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে জুন শেষ হওয়ার আগে ১২ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করা।

এর মধ্যে ৩ কোটি ডোজ গত মার্চের মধ্যে সরবরাহ করার কথা ছিল। বাকি ৯ কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল গত এপ্রিল থেকে আগামী জুনের মধ্যে।

এদিকে, ইইউয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ব্রাসেলসের আদালতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার আইনজীবী হাকিম বৌলারবাহ বলেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী টিকার সবগুলো ডোজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরবরাহের বাধ্যবাধকতা অ্যাস্ট্রাজেনেকার নেই। কারণ, চুক্তির শর্তে উল্লেখ আছে, ওই পরিমাণ টিকা সরবরাহে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ‘যৌক্তিকভাবে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা’  চালাবে।

তবে পরে রয়টার্সের পক্ষ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার আইনজীবী হাকিম বৌলারবাহের কাছে যখন জানতে চাওয়া হয়, জুন শেষ হওয়ার আগে ১২ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের ব্যাপারে ইইউর দাবি অ্যাস্ট্রাজেনেকা মেনে নেবে কি না— তখন তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা এর আগে বলেছিল, টিকা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সমস্যা এবং রপ্তানি নিষেধজ্ঞার কারণে তারা যথাসময়ে টিকা সরবরাহ করতে পারছে না।

মঙ্গলবার আদালতে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক মামলাটি গ্রহণ করেছেন। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর। ইউরোপের আইন বিচারব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশেষজ্ঞের ধারণা, আগামী বছরের আগে এই মামালার রায় আসবে না।  

এর আগে গত এপ্রিলের শেষে প্রথমবারের মতো অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিল ইইউ। ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহে বিলম্ব করেছে।

ইইউর দ্বিতীয় মামলার বিষয়ে ইইউয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, এই মামলাটি আসলে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া তেমন কিছু নয়। তবে এই মামলার রায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।

ওই কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, টিকার সরবরাহে বিলম্বের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করা হচ্ছে।  আপাতত টিকার ডোজ প্রতি ১ ইউরো করে ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ শেষে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ কত হওয়া উচিত, তা আদালতে জানাবে ইইউ।

তবে মঙ্গলবার আদালতের শুনানি শেষে ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র স্টেফান ডি কিরসমেকার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই মামলার উদ্দেশ্য টিকার সরবরাহ পাওয়া, অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে সাজা দেওয়া কিংবা জরিমানা করা নয়।

সূত্র: এএফপি, রয়টার্স

এসএমডব্লিউ