ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার স্থানীয় ব্যুরো কার্যালয়ে হুমকি দেওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শনিবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী হামলা চালিয়ে মাত্র দুই সেকেন্ডের মধ্যে ওই কার্যালয়টি গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

ছবিতে দেখা যায়, বোমার আঘাতে আল-জালা নামের ১১ তলা ভবনটি ধসে পড়ে। আকাশচুম্বী ওই ভবনে আল-জাজিরা ছাড়াও মার্কিন বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) কার্যালয় ছিল।

আল-জাজিরার প্রতিনিধি সাফওয়াত আল-কাহলোত গাজায় গণমাধ্যমটির কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার ইসরায়েলি অভিযানের দুঃসহ স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‌‘আমি গত ১১ বছর ধরে এই কার্যালয়ে কর্মরত। এই ভবনটি থেকে অনেক ঘটনার সংবাদ পরিবেশন করেছি। মাত্র দুই সেকেন্ডের মধ্যে ভবনটি ধ্বংস হয়ে গেছে।’

সাফওয়াত আল-কাহলোত বলেন, এই দুঃখজনক ঘটনা সত্ত্বেও আমার সব সহকর্মী এক সেকেন্ডের জন্য তাদের কাজ বন্ধ করেননি। সংবাদ পরিবেশনে তারা বিকল্প উপায় খুঁজছেন।

গাজা শহর থেকে আল-জাজিরার হ্যারি ফাওসেত বলেন, এটি আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত ব্যক্তিগত এক মুহূর্ত। কাজের এই জায়গাটি আর নেই; সেটি চিন্তাও করা যাচ্ছে না।

ইসরায়েল হুমকি দেওয়ায় শনিবার হামলার এক ঘণ্টা আগেই ভবনটির বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছিল। সাফওয়াত আল-কাহলোত বলেন, ভবনটি আক্রান্ত হওয়ার আগে তিনি ও তার সহকর্মীরা নিজেদের এবং অফিসের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন— ক্যামেরা সরিয়ে নিয়েছেন।

বিদেশি গণমাধ্যমগুলোর এই কার্যালয়ে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এই হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমা হামলা টানা ষষ্ঠ দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। এর মাঝেই শনিবার ভোরের দিকে এই উপত্যকার একটি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন; যাদের আটজনই শিশু।

শুক্রবার সংঘাত ছড়িয়েছে গাজা থেকে বিচ্ছিন্ন ফিলিস্তিনের অপর অংশ পশ্চিম তীরেও। এদিন পশ্চিম তীরেও অন্তত ১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত কয়েশ শ। ইসরায়েলি সেনাদের গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার থেকে ইসরায়েলের টানা হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৯ শিশুসহ ১৪০ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে।

সংঘাত থামাতে ইসরায়েলে মার্কিন দূত

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান সংঘাত থামাতে আলোচনার লক্ষ্যে তেল আবিবে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দূত হাদি আমর। উভয়পক্ষকে অস্ত্রবিরতিতে রাজি করাতে ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা রয়েছে তার।

কথিত শান্তি পরিস্থিতি ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বের কূটনীতিকদের আহ্বান ও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে আগামী রোববার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠকের আগ মূহর্তে মার্কিন দূতের এই তেল আবিব সফর তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সম্পর্কবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হাদি আমর। বিবিসি লিখেছে, হাদি আমর একজন মধ্যম-পর্যায়ের কূটনীতিক, যিনি মর্যাদায় যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রশাসনের বিশেষ দূতের সমপর্যায়ের নন।

এসএস