গত ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সোমবার প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দেখা গেছে মিয়ানমারের নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিকে। আজ প্রথমবার সশরীরে আদালতে হাজিরা দিয়েছেন তিনি। আদালতে উপস্থিত হয়ে অভ্যুত্থানের পর প্রথমবার মন্তব্য করে সু চি তার দল এনএলডিকে বিলুপ্ত করতে জান্তা সরকারের অপচেষ্টা নিয়ে বলেন, ‘যতদিন মানুষ থাকবে, ততদিন আমার দলটিও থাকবে।’   

গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার অশান্ত। প্রতিদিন বিক্ষোভ হয়েছে দেশজুড়ে। এছাড়া দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে চলছে জান্তা সরকারের প্রতি অসহযোগ আন্দোলন। আন্দোলনে জান্তা সরকারের হাতে ৮ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে আন্দোলন থেমে নেই। সুচির দল ছায়া সরকার গঠন করেছে। বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিয়েছে দেশটির জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো।   

এদিকে সম্প্রতি মিয়ানমারে সামরিক জান্তার নিয়োগ দেওয়া নির্বাচন কমিশন নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি’র দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসিকে (এনএলডি) বিলুপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অথচ এই এনএলডি গত নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়তে যাচ্ছিল। সু চির নেতৃত্বে পার্লামেন্টে প্রথম অধিবেশন শুরুর দিন ভোরেই সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হয়। 

এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী সোমবার সশরীরে আদালতে হাজিরা দিয়ে সু চি আইনজীবীকে বলেছেন যে, জান্তা কর্তৃপক্ষ যতই চেষ্টা চালিয়ে যাক না কেন তার দল এনএলডি ততদিন থাকবে যতদিন মানুষের অস্তিত্ব থাকবে। তার আইনজীবী মিন মিন সোয়ে এএফপি বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে ৩০ মিনিট ধরে কথা বলেছে, এ সময় তাকে আমার (সু চি) বেশ সুস্থ ও সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে।’     

সু চির আইনজীবী মিন মিন সোয়ে আরও বলেন, ‘তিনি (সু চি) তার সমর্থকদের সুস্থ দেখতে চান ও তিনি এটাও নিশ্চিত করেছেন যে, ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি ততদিন থাকবে যতদিন মানুষের অস্তিত্ব থাকবে। কারণ এই দলটি মানুষের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।’

এএফপির সংবাদদাতা বলেছেন, অভ্যুত্থানের পর প্রথমবার সু চিকে জনসম্মুখে দেখা গেল। তাই রাজধানী শহর ন্যাপিডোতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ছিল খেয়াল করার মতো। বিশেষভাবে নির্মিত ওই আদালতে যাওয়ার রাস্তাটি পুলিশের ট্রাক দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

গত নভেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে দাবি করে সামরিক বাহিনী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু তখনকার নির্বাচন কমিশন ভোটে কোনো ধরনের কারচুপির প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিল।

সামরিক অভ্যুত্থানের পর গ্রেফতার হওয়া সু চি এখনও বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা চলছে। এর মধ্যে ঔপনিবেশিক আমলের ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের’ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তার ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডও হতে পারে।

এএস