অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বুধবার সকালে পূর্ব ভারতের ওডিশা উপকূলে আঘাত হানা ইয়াস তার শক্তি হারিয়েছে। ভারতের আবহাওয়া দফতর থেকে সন্ধ্যায় জানানো হয়েছে, দুপুরের দিকেই অতিপ্রবল থেকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়া ইয়াস এখন সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।  

বুধবার সকালে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর থেকে ক্রমশ শক্তি হারায় ইয়াস। ভারতের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শক্তি ক্ষয় করতে করতে বুধবার মধ্যরাতের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ফের অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে ঝড়টি শেষ হয়ে যাবে।

বঙ্গোপসাগরের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে শুরু হওয়া নিম্নচাপ ধীরে ধীরে শক্তি বাড়িয়ে গত সোমবার ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছিল। তারপর থেকে ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে প্রথমে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এবং পরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।

ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর থেকে বুধবার সন্ধ্যায় ইয়াস উপকূলে আছড়ে পড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার তা বদলে দুপুরের দিকে আঘাত হানার কথা বলা হয়। কিন্তু আজ বুধবার সকাল ৯টার পরই ওডিশার বালেশ্বরের দক্ষিণে স্থলভাগে আছড়ে পড়ে এই ঘূর্ণিঝড়।

ইয়াসের স্থলভাগে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। উপকূলে আঘাত হানার সময় এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার। এরপর ধীরে ধীরে শক্তি হারায় এটি। বুধবার মধ্যরাতের মধ্যে ইয়াস সম্পূর্ণ শক্তি হারিয়ে ঝোড়ো হাওয়ায় পরিণত হবে। এটি এখনো ওডিশা রাজ্যেই অবস্থান করছে।

তবে শক্তি কমার আগে ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গে বেশ তাণ্ডব চালিয়েছে ইয়াস। দুই প্রদেশেই ভারী বর্ষণ ও দমকা হাওয়া বইছে। ঘূর্ণিঝড়টি দুই প্রদেশে অন্তত পাঁচজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে ওডিশায় দুজন এবং পশ্চিমবঙ্গে তিন জন প্রাণ হারান। 

ইয়াসের প্রভাবে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও প্লাবনের শিকার পশ্চিমবঙ্গে অন্তত এক কোটি মানুষ ও তিন লক্ষাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইয়াসে ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব দিয়ে এমন তথ্যই জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।

দেশটির টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ইয়াসের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে, তীব্র বাতাস এবং ভারী বর্ষণ হচ্ছে ওডিশায়। ঝড়ের তাণ্ডবে অনেক গাছপালা উপড়ে পড়েছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত বাড়িঘর।

এবার জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা এতটাই ছিল যে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা শহরের সব দোকানপাট ও একতলা বাড়িঘর ডুবে গেছে। এ ছাড়াও দিঘার রাস্তাঘাট আর সমুদ্র একাকার হয়ে গেছে। জলোচ্ছ্বাসে ডুবে গেছে খেতের ফসল। ভাসিয়ে নিয়ে গেছে অনেক গবাদিপশু। ক্ষতি হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনাতেও। তবে এ যাত্রায় বেঁচে গেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা।

এএস/জেএস