সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ

বিপুল পরিমাণ ভোট পেয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বাশার আল আসাদ। এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট হলেন তিনি।

বুধবার সিরিয়াতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তার পরের দিন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সেই নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন দেশটির পার্লামেন্ট প্রধান হাম্মুদা সাব্বাঘ।

সংবাদ সম্মেলনে সাব্বাঘ জানান, ৯৫ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বাশার আল আসাদ। মোট ১ কোটি ৪০ লাখ ভোটার এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। শতকরা হিসেবে দেশের ৭৮ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন এই নির্বাচনে।

এবার সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন তিন জন, তবে বাশার ছাড়া বাকি দু’জন অনেকটাই অখ্যাত বা নিষ্প্রভ। এই দুই প্রার্থীর একজন হলেন সিরিয়ার সাবেক কেবিনেট মন্ত্রী আব্দুল্লাহ সালোম আব্দুল্লাহ এবং সিরিয়ার একটি ছোট রাজনৈতিক দলের সভাপতি মাহমুদ আহমেদ মারেই।

সংবাদ সম্মেলনে সাব্বাঘ বলেন বাশারের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি মারেই পেয়েছেন ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট এবং সালোম পেয়েছেন ১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট।

পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশ অবশ্য এই নির্বাচনের ফলাফলে আপত্তি জানিয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সিরিয়ার নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। সিরিয়ার প্রতি বৈরীভাবাপন্ন অপর দেশ তুরস্কের রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের নেতৃত্বাধীন সরকারও জানিয়েছে, এই নির্বাচন অবৈধ।

সিরিয়ার যুদ্ধে মারা গেছে কয়েক লাখ মানুষ

সিরিয়ার ভেতরেও এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছে। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি বিদ্রোহীরা নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছে।

সিরিয়ার তেল সমৃদ্ধ অঞ্চল ইদলিব নিয়ন্ত্রণ করে কুর্দি বিদ্রোহীরা। এটিই বর্তমানে একমাত্র অঞ্চল, যা এখনও বিদ্রোহীদের দখলে আছে। বৃহস্পতিবার নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়ে মিছিলও হয়েছে ইদলিবে।

তবে এর বাইরে, সিরিয়ার অধিকাংশ জনগণ নির্বাচনের ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছেন। সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে দেশের পতাকা ও বাশার আল আসাদের ছবি হাতে আনন্দ মিছিল করেছেন সেখানকার জনগণ।

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক বার্তায় সিরিয়ার জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাশার আল আসাদ বলেন, ‘সিরিয়ার জনগণের জাতীয়তাবোধ এবং নির্বাচনে তাদের ব্যাপকমাত্রায় অংশগ্রহণকে আন্তরিকভাবে স্বাগত ও ধন্যবাদ জানাই। দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান ও অনুরোধ থাকবে— আসুন, আমরা সবাই মিলে শিশু ও তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি নতুন সিরিয়া গঠনে আত্মনিয়োগ করি এবং আগামীকাল থেকেই এই কাজ শুরু হোক।’

বাশার আল আসাদের বাবা হাফিজ আল আসাদও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ত্রিশ বছর দেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে ২০০ সালে মারা যান তিনি।

বাবার মৃত্যুর পর দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন বাশার আল আসাদ। প্রথম ১০ বছর মোটামুটি চললেও ২০১১ সাল থেকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয় সিরিয়ায়। এরপর উত্থান ঘটে চরম মৌলবাদী গোষ্ঠী আইএসএর। ফলে প্রায় এক দশকের গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত অবস্থায় পৌঁছায় সিরিয়া। দেশটির বেশ কিছু এলকা কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে বেহাত হয়ে চলে যায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছে।

বিদেশে শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ সিরিয় নাগরিক

প্রায় দশ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়া এখন বিপর্যস্ত। ২০১১ সালে আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সরকারি বাহিনীর রক্তক্ষয়ী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এ গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। এ লড়াইয়ে প্রায় তিন লাখ ৮৮ হাজার মানুষ মারা গেছে এবং দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এর মধ্যে বিদেশে শরণার্থী শিবিরে আছে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ।

 

এছাড়া, দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার অর্থনৈতিক অবকাঠামোর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে দেশটিতে রেমিটেন্সের প্রবাহ কমে গেছে, পাশাপাশি একই কারণে সিরিয়ার দুই গুরুত্বপূর্ণ মিত্র রাশিয়া ও ইরানও দেশটিতে সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ায় দিন দিন দারিদ্র প্রকট হয়ে উঠছে দেশটিতে।

তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মোট ভূখণ্ডের ৩০ শতাংশ এখনও বিদ্রোহীদের দখলে আছে। বাশার আল আসাদের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সেই দখলকৃত এলকাগুলো উদ্ধার করা।

এইচকে/ এসএমডব্লিউ