অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে সেরাম ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিন

ফাইজার, অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা উৎপাদিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বের কয়েকটি দেশ। ভারতেও অনুমোদন দেয়া হয়েছে দুটি ভ্যাকসিনের। এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেকের নিজস্ব ভ্যাকসিন উৎপাদন করে পৌঁছে দেবে সরকারের কাছে। তবে প্রতি ১০০টি ভ্যাকসিন নিতে হলে ভারত সরকারকে কিনতে হবে ১১১টি। কেননা ১১টি ভ্যাকসিন নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ১০টি ভ্যাকসিনে নষ্ট হবে একটি।

ভ্যাকসিন দুটি হলো- অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে সিরাম ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ এবং ভারত বায়োটেকের তৈরি ‘কোভ্যাক্সিন’।

করোনা ভ্যাকসিনের অনুমোদনের পরই কতটি নষ্ট হতে পারে, সেই হিসেব কষে এ তথ্য ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে নষ্ট হওয়ার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ শতাংশের মতো। সংখ্যার হিসেবে ১০০টি ভ্যাকসিনের দরকার হলে সরকারকে কিনতে হবে ১১১টি। এই অনুযায়ী কোন রাজ্যে কত ভ্যাকসিন লাগবে, তার তথ্য-পরিসংখ্যান রাজ্যগুলোর কাছ থেকে চেয়েছে কেন্দ্র।

একজন ব্যবহারকারীকে দুই ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই নিতে হবে দুটি করে ডোজ।

ইউনিভার্সাল ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রামের (ইউআইপি) দেয়া তথ্যমতে, উৎপাদন কেন্দ্র থেকে প্রান্তিক ব্যবহারকারী পর্যন্ত পৌঁছনোর মাঝে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ, এতেই কিছু সংখ্যক ভ্যাকসিন নষ্ট হয়। অর্থাৎ পরিবহনের সময় দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে নষ্ট হতে পারে। করোনার ভ্যাকসিন ২-৮ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে সংরক্ষণ করার কথা। সে ক্ষেত্রেও যান্ত্রিক ত্রুটিতেও কিছু নষ্ট হতে পারে। আবার টিকা কেন্দ্রে পৌঁছনোর পরও প্রান্তিক ব্যবহারকারীকে প্রয়োগ পর্যন্ত কিছু নষ্ট হতে পারে।

এই নষ্ট হওয়ার বিষয়টিকেই বলা হয় ‘ওয়েস্টেজ মাল্টিপ্লিকেশন ফ্যাক্টর’ তথা ডব্লিউএমএফ। বিভিন্ন ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এই হার বিভিন্ন রকম। করোনার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এই হার ১০ শতাংশের মতো নির্ধারণ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, প্রতি ১০০ জনের জন্য ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে ২২২টি। একইভাবে ৩০ কোটি মানুষের জন্য প্রয়োজন হবে ৬৬ কোটি ছয় লাখ ভ্যাকসিন। তবে এই নষ্ট হওয়ার সংখ্যা যতটা সম্ভব কমানো যায়।

সব দেশ টিকা পাবে?

বিশ্বের কয়েকটি দেশে অনুমোদন দেয়া হলেও শুরুর এ সময়ে সব দেশে করোনার ভ্যাকসিন পৌঁছাবে কি না- এই নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।

১৭২টি দেশের একটি জোট (যুক্তরাষ্ট্র এ জোটে নেই) কোভ্যাক্স। সব দেশের সব নাগরিকের কাছে দ্রুত, ন্যায়সঙ্গত ও পক্ষপাতহীন উপায়ে ভ্যাকসিন পৌঁছানোর নিশ্চয়তা চায় এ জোট। প্রাণঘাতী ও সংক্রামক ব্যাধি থেকে দরিদ্র দেশগুলোর শিশুদের জীবনরক্ষায় টিকা প্রদানে ভূমিকা রেখে আসা আন্তর্জাতিক জোট গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহ-নেতৃত্বে কোভ্যাক্স ৯টি ফার্মাসিউটিক্যালস ডেভেলপারের কাছ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের ব্যবস্থা করে রেখেছে। ভ্যাকসিনগুলো অনুমোদন পেলেই তা সংগ্রহ করা হবে।

ভ্যাকসিনের ২০০ কোটি ডোজ সংগ্রহের উদ্দেশে ২০২১ সালের মধ্যে কোভ্যাক্স ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার সংগ্রহ করতে চায়। কিন্তু কোনো ভ্যাকসিনের যদি একটি ডোজেও কাজ হয় (এখনও অনুমোদিত ভ্যাকসিনগুলোর দুটি ডোজ প্রয়োজন হয়) তবেও ২০০ কোটি ডোজ দিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সব মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে না। আর যদিও এমন আশা আছে যে, ভারতের মতো দেশগুলোতে উৎপাদকরা স্বল্পমূল্যে ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবে, তারপরও বৈশ্বিক জোগান চাহিদার চেয়ে কমই থেকে যাবে। এরপরও আপাতত ভারত টিকা রপ্তানি করতে পারবে না বলে যে সিদ্ধান্ত জানা গেল তাতে পরিস্থিতি কার্যত আরও জটিল হচ্ছে।

এফআর