প্রস্তুতকৃত পণ্যগুলো সুস্বাস্থ্যের স্বীকৃত মাণদণ্ড পূরণ করে না— সমালোচনার জেরে অবশেষে নতুন পদক্ষেপ নিল খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নেসলে।  এখন থেকে পণ্যের মান উন্নয়নে আরও মনযোগ দেবে কোম্পানি।

পাশাপাশি, সেগুলোর মোড়কের গায়ে পণ্যগুলোর পুষ্টিমান সংক্রান্ত তথ্যসমূহ স্পষ্টভাবে সংযোজিত থাকবে বলেও জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে মঙ্গলবার একটি ইমেইল বার্তা দিয়েছে নেসলের উৎপাদিত খাদ্যপণ্য কিটক্যাটের প্রস্তুতকারক বিভাগ। সেখানে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, এখন থেকে উৎপাদিত প্রতিটি পণ্যের পুষ্টিমান পর্যালোচনা করবে কর্তৃপক্ষ। যদি কোনো উৎপাদিত খাদ্যপণ্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পুষ্টিমানের চেয়ে পিছিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সেগুলোর মান যথাযথভাবে উন্নত করে তবেই তা ছাড়া হবে বাজারে।

এর পাশাপাশি গ্রাহকের সুবিধা ও জ্ঞাতার্থে খাদ্যপণ্যের মোড়কের গায়ে ওই পণ্যের পুষ্টিমান ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রাপ্ত পয়েন্ট লিপিবদ্ধ থাকবে।

সোমবার (৩১ মে) ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস তাদের পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি নেসলের একটি অভ্যন্তরীণ গোপন নথি সম্প্রতি তাদের হাতে এসেছে, যেখানে কোম্পানির তরফ থেকে স্বীকার করা হয়েছে যে তাদের মোট উৎপাদিত খাদ্যপণ্য ও পানীয়ের ৬০ শতাংশই সুস্বাস্থ্যের স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার হেলথ স্টার রেটিং সিস্টেম অনুযায়ী, পোষ্যপ্রাণীর এবং বিশেষায়িত পুষ্টিকর মেডিক্যাল খাবার ছাড়া নেসলের অন্যান্য মোট উৎপাদিত খাদ্য ও পানীয় সামগ্রীর মাত্র ৩৭ শতাংশ পণ্য ৩ দশমিক ৫-এর ওপরে রেটিং পেয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার এই রেটিং সিস্টেমে স্বাস্থ্যকর খাবারের মানদণ্ড নির্ধারণে ৫ এর মধ্যে স্কোর দেওয়া হয়। অ্যাকসেস টু নিউট্রিশন ফাউন্ডেশনের মতো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও পানীয়র গবেষণা কাজে অস্ট্রেলিয়ার এই রেটিং ব্যবহার করে।

খাদ্য ও পানীয়র পোর্টফোলিওতে নেসলের প্রায় ৭০ শতাংশ খাদ্যপণ্য ওই প্রান্তিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে নথিতে বলা হয়েছে। খাঁটি কফি ছাড়া ৯৬ শতাংশ পানীয় এবং ৯৯ শতাংশ মিষ্টিজাতীয় খাবার এবং আইসক্রিম এই মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি।

তবে কোম্পানির পানি এবং দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য অন্যান্য পণ্যের তুলনায় ভালো স্কোর পেয়েছে। নেসলের পানির ৮২ শতাংশ এবং দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যের ৬০ শতাংশ সু-স্বাস্থ্যের স্বীকৃত সংজ্ঞার মানদণ্ড উতরে গেছে।

বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস ও স্থুলতার হার বাড়তে থাকায় প্রতিবছরই চাপ বাড়ছে নেসলে, পেপসিকো, ম্যাকডোনাল্ডসের মতো খাদ্যপণ্য ও পানীয় প্রস্তুতকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর। এক সমীক্ষায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউিএইচও) জানিয়েছে ১৯৭৫ সালের তুলনায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক স্থুলতা বেড়েছে তিনগুণ।

পৃথিবীজুড়ে এই স্থুলতাবৃদ্ধির জন্য বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর প্রস্তুতক করা মুখরোচক কিন্তু পুষ্টিগত দিক থেকে নিম্নমানের খাদ্যপণ্য ও পানীয় অনেকাংশে দায়ী বলে উল্লেখ করেছে ডব্লিউেএইচও।   

সূত্র: ব্লুমবার্গ

এসএমডব্লিউ