‘গরিবের পোপ’ কতটা হতে পেরেছিলেন ফ্রান্সিস?
খ্রিস্টান ধর্মের রোমান ক্যাথলিক শাখার প্রধান ধর্মগুরু সদ্যপ্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস বিভিন্ন সময়ে পুঁজিবাদ এবং পরিবেশগত ধ্বংসের নিন্দা করেছেন, কারাবন্দি তরুণদের পা ধুয়ে দিয়েছেন এবং সহনশীলতার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু লাতিন আমেরিকার প্রথম এই পোপ ‘গ্লোবাল সাউথের’ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি।
২০১৩ সালের মার্চে অনেক সম্ভাবনা নিয়ে পোপের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ফ্রান্সিস। সোমবার তার মৃত্যু হয়েছে। পোপ হওয়ার পর ইস্টারের আগে এক বন্দি শিবিরে দণ্ডপ্রাপ্ত তরুণদের পা ধুয়ে দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সে বছরের জুলাইয়ে রিও ডি জেনেইরোতে ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ডেতে অংশ নিয়েছিলেন কয়েক লাখ মানুষ। পোপ সেখানে গরিবের জন্য সুযোগের কথা বলেন এবং পুঁজিবাদের সমালোচনা করেন।
ব্রাজিলের ধর্মতত্ত্ববিদ লিওনার্দো বফি সেসময় বলেছিলেন, ‘‘এই পোপ চার্চ বদলে দেবেন।’’ ফ্রান্সিস, আগে যার নাম ছিল হর্খে মারিও ব্যার্গোগলিও, চার্চে কিছু পরিবর্তন আনতে পেরেছেন।
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সিসকে নিয়ে বই লেখা আর্জেন্টিনার সাংবাদিক মিগায়েল হার্শ বলেন, ‘‘বুয়েন্স আইরেসের আর্চবিশপ থাকাকালীন পোপ গরিবের জন্য অনেক কিছু করেছিলেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘তিনি (পোপ ফ্রান্সিস) দ্রুততার সঙ্গে অনেক কিছু করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে চল্লিশটার মতো সফর, যার অধিকাংশই বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে। এবং তিনি বারবার পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নিন্দা করেছেন।’’
তবে এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্যাথলিক চার্চের প্রধানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি গ্লোবাল সাউথের অনেক প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। জলবায়ু পরিবর্তনকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিয়েছেন ফ্রান্সিস। জার্মান ক্যাথলিক ত্রাণ সংগঠন মিসেরিওরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পোপের অন্যতম বড় অর্জন হচ্ছে, পরিবেশের ওপর মনোযোগ আকর্ষণ করাতে পারা।
মিসেরিওর মনে করেন, দারিদ্র্য এবং পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি একত্রে বিবেচনা করার ব্যাপার। ২০১৫ সালে প্রকাশিত পোপের এক চিঠিতে এটাই ছিল মূল বার্তা।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ২০১৩ সাল পর্যন্ত কার্ডিনালদের অধিকাংশই ছিলেন ইউরোপীয়। তবে পোপ হওয়ার পর ফ্রান্সিস লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কার্ডিনাল নিয়োগ দিয়েছেন।
তবে ক্যাথলিক চার্চে কোনো নাটকীয় পরিবর্তন আনেননি তিনি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিবাহিত পুরুষদের যাজক এবং নারীদের পুরোহিত করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ক্যাথলিক চার্চে যৌন নিগ্রহের ঘটনা নিয়ন্ত্রণেও কড়া উদ্যোগ নিতে পারেননি পোপ ফ্রান্সিস। তবে তিনি বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন।
এসএস