জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য চীনের সরকার যে নীতি গ্রহণ করেছে তাতে দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের জনসংখ্যা আগামী ২০ বছরে এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। জার্মানির একজন গবেষক সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে এই তথ্য তুলে ধরেছেন।

এই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য চীন সরকার যে আঞ্চলিক নীতি গ্রহণ করেছে তাতে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের জিনজিয়াংয়ে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যা আগামী ২০ বছরে ২৬ লাখ থেকে ৪৫ লাখ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

জিনজিয়াং প্রদেশে জোরপূর্বক জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পশ্চিমা দেশ চীনকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করেছে। কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করে চীন দাবি করেছে যে, জন্মহার কমে যাওয়ার পেছনে অন্য কারণ রয়েছে।

জিনজিয়াং প্রদেশে চীন সরকারের দমন-পীড়নের কারণে উইঘুর এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জনসংখ্যার ওপর প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন জার্মানির গবেষক অ্যাডরিন জেনজ। চীনে সরকারের নতুন নীতির আগে দেশটির গবেষকরা ধারণা করেছিলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু চীন সরকারের নতুন দমন-পীড়নের কারণে জিনজিয়াং প্রদেশে আগামী ২০ বছর পর জনসংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৮৬ লাখ থেকে এক কোটি পাঁচ লাখে।

জার্মান গবেষক অ্যাডরিন জেনজ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, উইঘুর মুসলিমদের বিষয়ে চীন সরকারের যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে সেটি উঠে এসেছে এই গবেষণায়। জেনজ তার রিপোর্টে বলেছেন, ২০১৯ সালের মধ্যে জিনজিয়াং কর্তৃপক্ষ সেখানকার চারটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর জবরদস্তি-মূলক জন্মনিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করে। এ জন্য সন্তান জন্মদানে সক্ষম ৮০ শতাংশ নারীকে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা ধরনের সার্জারি এবং বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচী নেওয়া হয়।

ব্যাপকভাবে জন্মহার কমে যাওয়া

বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, জিনজিয়াং প্রদেশে চীন প্রায় ১০ লাখ উইঘুর মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের আটকে রেখেছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা। খবরে বলা হচ্ছে, চীনের মূলধারার হান জনগোষ্ঠিকে জিনজিয়াংয়ের কিছু এলাকায় বসবাসের জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে।

জার্মান গবেষক জেনজ-এর বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, চীন সরকারের নতুন নীতির কারণে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের জনসংখ্যা কমলেও হান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়বে।

চীনের সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে জন্মহার প্রায় ৪৯ শতাংশ কমেছে। গত সপ্তাহে চীন সরকার ঘোষণা করেছে যে, এখন থেকে দম্পতিরা তিনটি পর্যন্ত সন্তান নিতে পারবে।

চীনে আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে জন্মহার ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরে সরকার এই ঘোষণা দিয়েছে। তবে জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে চীনের ভিন্ন নীতি দেখা গেছে। ফাঁস হওয়া বিভিন্ন তথ্যে দেখা যাচ্ছে, জন্মনিয়ন্ত্রণের কোটা ছাড়িয়ে গেলে নারীদের আটকে রাখা হচ্ছে কিংবা শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

জার্মান গবেষক জেনজ এর আগে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন সেখানে বলা হয়েছে, জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু গর্ভবতী নারীরা যদি গর্ভপাত করাতে রাজি না হয় তাহলে তাদের আটকে রাখার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অনেক নারীকে জন্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য এবং জোরপূর্বক তাদের বন্ধ্যা করা হচ্ছে।

তবে চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, উইঘুর মুসলিমদের টার্গেট করে সেখানে কিছু করা হচ্ছে না। সার্বিকভাবে দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তার প্রভাব জিনজিয়াংয়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরও পড়েছে। এছাড়া সে অঞ্চলে মানুষের আয় বৃদ্ধি এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ সহজলভ্য হওয়ায় জন্মহার কমেছে বলে দাবি করছে দেশটি।

এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলছে, সেখানে গণহত্যার যে কথা বলা হচ্ছে সেটি ‘পুরোপুরি ননসেন্স’। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে যে চীন-বিরোধীরা রয়েছে এটি তাদের উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা। তারা সবসময় চীন-ভীতিতে ভোগে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

টিএম