এ পর্যন্ত বিশ্বে যত করোনা টিকা উৎপাদন ও বিক্রি হয়েছে, তার ৭৫ শতাংশই পেয়েছে বিশ্বের মাত্র ১০টি দেশ। কম জিডিপি বা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলো এখন পর্যন্ত পেয়েছে ১ শতাংশেরও কম টিকা।

বুধবার (৯ জুন) জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া এক লিখিত বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

বিবৃতিতে ডব্লিউএইচওর পক্ষ থেকে বলা হয়, উন্নত দেশগুলো যেখানে তাদের নাগরিকদের অর্ধেকেরও বেশি অংশকে টিকার আওতায় আনতে পেরেছে সেখানে বিশ্বের অনেক দেশ এখন পর্যন্ত টিকার ডোজের অভাবে টিকাদান কর্মসূচি শুরুই করতে পারেনি।

উদাহারণ হিসেবে বিবৃতিতে বলা হয়, জার্মানির ৪৫ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যে করোন টিকার অন্তত একটি ডোজ পেয়েছেন। কিন্তু তাঞ্জানিয়া, চাদসহ অনেক দেশ এখন পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে পারেনি; কারণ এই দেশগুলোর কাছে কোনো টিকা নেই।

সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে ২০২০ সালে গ্যাভি ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটসহ কয়েকটি দাতা সংস্থার সহযোগীতায় কোভ্যাক্স প্রকল্প চালু করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই প্রকল্পের আওতায় বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে, তবে তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম।

কোভ্যাক্স প্রকল্পের জন্য টিকা কিনতে অবশ্য দাতা দেশগুলোর কাছে সহায়তা চেয়েছে ডব্লিউএইচও। এ লক্ষ্যে গত সপ্তাহে অনলাইনে একটি ভার্চুয়াল সম্মেলনেরও আয়োজন করে সংস্থাটি। সম্মেলনে বিভিন্ন দাতা দেশের প্রতিনিধিরা করোনা টিকা ক্রয়বাবদ ১৯ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা দেওয়ার অঙ্গীকারও করেছেন।

তবে জটিলতা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। বিভিন্ন দেশ কোভ্যাক্সে টিকা না দিয়ে কৌশলগত স্বার্থের বিষয় বিবেচনা করে সরাসরি বন্ধু দেশকে টিকা দিচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি ল্যাটিন অ্যামেরিকা, ক্যারিবিয়ান, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আট কোটি ডোজ টিকা দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। এর তিন-চতুর্থাংশ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে দেয়া হবে৷ বাকিটা সরাসরি বিভিন্ন দেশকে দেয়া হবে।

ক্ষুধা নিবারণে কাজ করা বৈশ্বিক সংস্থা ব্রেড ফর দ্যা ওয়ার্ল্ডের কর্মকর্তা মারাইকে হাসে এ প্রসঙ্গে ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, বিতরণে সমতা আনতে হলে কোভ্যাক্সের মাধ্যমেই টিকা বিতরণ করতে হবে।’

তবে কোভ্যাক্স প্রকল্পের কিছু দুর্বলতাও তুলে ধরেছেন মারাইকে হাসে। ডয়েচে ভেলেকে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোভ্যাক্স কর্মসূচির একটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে এটি ঐচ্ছিক ভিত্তিতে কাজ করে। এছাড়া, পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় কোভ্যাক্স প্রয়োজনীয় টিকাও কিনতে পারছে না।’

‘আর টিকা কোম্পানিগুলো কোভ্যাক্সের সঙ্গে কাজ করার চেয়ে যারা বেশি দাম দিতে পারবে তাদের সঙ্গে কাজ করতে বেশি আগ্রহী।’

ডব্লিউএইচও সূত্র ডয়েচে ভেলেকে জানিয়েছে, দাতাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, তাতে এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ১৫ কোটি ডোজ করোনা টিকা বিতরণ করতে পারবে কোভ্যাক্স। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য ছিল, চলতি বছর সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২৫ কোটি ডোজ টিকা বিতরণ করা।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এসএমডব্লিউ