সংঘাতকবলিত ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলের তাইগ্রের পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পর জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সাহায্য বিষয়ক প্রধান মার্ক লোকক বলেছেন, ‌পূর্ব আফ্রিকার দেশটির ওই অঞ্চলে এখন দুর্ভিক্ষ চলছে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

বিবিসির শুক্রবারের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী জাতিসংঘের সহযোগিতা ও বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে পরিচালিত ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত তাইগ্রের সাড়ে তিন লাখ মানুষ ‘গুরুতর সংকটের’ মধ্যে বসবাস করছে।

ওই অঞ্চলে ইথিওপিয়ার সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের কারণে এ পর্যন্ত ১৭ লাখের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।

এ ধরনের বিশ্লেষণকে বলা হয় ইন্টিগ্রেটেড ফেজ ক্লাসিফিকেশন বা আইপিসি। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মিলে এই সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে।

আইপিসি পর্যালোচনায় দেখা গেছে তাইগ্রে অঞ্চলে খাদ্য সংকট ‘বিপর্যয়কর’ পরিস্থিতিতে চলে গেছে, যা ফলে বেড়েছে ক্ষুধা ও মৃত্যু।

এ রকম পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সংকট মোকাবেলায় জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

তবে এই বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত নয় ইথিওপিয়ার সরকার। তারা বলছে, ওই অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তারা সেখানে মানবিক ত্রাণ সাহায্যের কর্মসূচিও বিস্তৃত করছে।

তাইগ্রের পশ্চিমে বিচ্ছিন্ন কাফতা হোমেরা অঞ্চলের লোকজন বিবিসিকে বলেছেন যে, তারা এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন।

বিবিসিকে এক ব্যক্তি বলেন, ‘খাওয়ার জন্য আমাদের কিছু নেই। গত সাত মাস ধরে চলা যুদ্ধের মধ্যে ফসল এবং গবাদি পশু লুট হয়ে গেছে। যেসব মিলিশিয়া সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে তাদের কাছ থেকে ত্রাণ-সাহায্য নিতেও তাদেরকে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’

এক কৃষক বলেন, ‘যে সামান্য কিছু শস্য আমরা লুকিয়ে রাখতে পেরেছিলাম, সেগুলো খাচ্ছি, কিন্তু এখন আর কিছু নেই।’  

তিনি বলেন, ‘কেউ আমাদের কোনো ত্রাণ-সাহায্য দেয়নি। প্রায় সবাই এখন মৃত্যুর মুখে-ক্ষুধার কারণে আমাদের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি খুবই মারাত্মক। মৃত্যু আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। আমাদের প্রত্যেকের মুখে আপনি ক্ষুধা দেখতে পাবেন।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তারা ত্রাণ-সাহায্য নিয়ে গাড়ি যেতে দেখেছেন, কিন্তু কেউ তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়ার কথা ভাবেনি।

এর আগে ১৯৮৪ সালে ইথিওপিয়ার তাইগ্রে এবং প্রতিবেশী ওল্লো প্রদেশে খরা-যুদ্ধের কারণে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছিল, যাতে ছয় থেকে দশ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, মে মাস পর্যন্ত ৫৫ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগেছে এবং সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। তবে এই রিপোর্টে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষের কথা ঘোষণা করা হয়নি।

বিবিসি লিখেছে, দুর্ভিক্ষ শব্দটি এত শক্তিশালী যে খুব সহজেই এটি ব্যবহার করা হয় না। কিছু শর্ত পূরণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা একমত হওয়ার পরেই কোনো এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়।

এই রিপোর্টে তাইগ্রে অঞ্চলের পরিস্থিতিকে দুর্ভিক্ষের বদলে ‘বিপর্যয়কর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সতর্ক করে দিয়েছে যে, আগামী কয়েক মাসে ওই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

এএস