মার্কিন পুলিশের নির্যাতনে নিহত জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাদৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করা তরুণী ডারনেল্লা ফ্রেজিয়ার পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে পুলিৎজার কমিটি।

ডারনেল্লাকে পুরস্কার প্রদানের বিষয়ে শুক্রবারের বিবৃতিতে পুলিৎজার কমিটি বলেছে, ‘জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাদৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ ও তার প্রচারের মাধ্যমে ডারনেল্লা ফ্রেজিয়ার যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তাতে একদিকে যেমন বিশ্বজুড়ে পুলিশী নিষ্ঠুরতার চিত্র উন্মোচিত হয়েছে, তেমনি সত্য ও ন্যায়বিচারের পক্ষে নাগরিক সাংবাদিকতাকেও (সিটিজেন’স জার্নালিজম) অনুপ্রেরণা দিয়েছে।’

এ বিষয়ক এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলেছে, ডারনেলার ওই ভিডিওদৃশ্য যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার বিচারকাজেও এই ভিডিও এভিডেন্স বা সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকতার সর্বোচ্চ পুরস্কার পুলিৎজার। অনেকে একে সাংবাদিকতার নোবেল পুরস্কার হিসেবেও উল্লেখ করে থাকেন।

ভিডিওচিত্র ধারণের বিষয়ে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমকে ডারনেল্লা বলেছিলেন, গত বছর ২৫ মে  মিনিয়াপোলিসে এক আত্মীয়ের সঙ্গে হেঁটে যাওয়ার সময় ফ্লয়েডের গ্রেফতার ও নির্যাতনের দৃশ্য চোখে পড়ে তার এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নিজের সঙ্গে থাকা মোবাইলের ভিডিও ক্যামেরায় সেই দৃশ্য তিনি ধারণ শুরু করেন।

আদালতে ফ্লয়েডের বিচারকাজ যখন চলছিল তখন সেখানে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে ডারনেল্লা বলেন, ‘আমি যখন দেখলাম একজন মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত এবং প্রাণভিক্ষা চাইছে, তখনই তা ভিডিও করার সিদ্ধান্ত নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘ফ্লয়েড যখন বলছিলেন যে তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না, তা আমি শুনেছি। মৃত্যুর আগে তিনি তার মাকে ডাকছিলেন- এটাও আমার কানে এসেছে।’

গত বছর ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনোসেটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশী হেফাজতে খুন হন কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড। তার মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন ব্যাপকভাবে গতিপ্রাপ্ত হয় এবং মৃত্যুর পূর্বে ফ্লয়েডের উক্তি- ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ (আই ক্যান্ট ব্রেথ) পরিণত হয় আন্দোলনের স্লোগানে।

ফ্লয়েডকে হত্যায় অভিযুক্ত মার্কিন পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শাওভিনের বিচার চলছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে। তার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে- সেকেন্ড ডিগ্রি হত্যা, থার্ড ডিগ্রি হত্যা ও নরহত্যা।

আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ডারনেল্লা ফ্রেজিয়ার বলেছিলেন, ‘আমি যখন জর্জ ফ্লয়েডকে দেখছিলাম তখন মনে হচ্ছিল, আমি আমার মাকে দেখছি, বাবাকে দেখছি, ভাই-বোন-আত্মীয়স্বজনদের দেখছি, কারণ তারা সবাই কৃষ্ণাঙ্গ।’

‘তাদের কাউকে এই অবস্থায় দেখলে আমার যেমন মনে হতো, জর্জ ফ্লয়েডকে দেখার পরও আমার একই অনুভূতি হয়েছিল।’

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ