ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযানরত ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী সেখানে ইসরায়েলের সরকারের যে কোনো নির্দেশ মেনে চলতে কিংবা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।

এক্সবার্তায় তিনি বলেন, “সেনাপ্রধানের অধিকার এবং দায়িত্ব হলো যথাযথ ফোরামে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করা; কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে…বিশেষ করে (গাজায়) যুদ্ধ সম্পর্কে, তাহলে সেই লক্ষ্য দৃঢ়তা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সেনাবাহিনীকে পূরণ করতে হবে এবং সেনাবাহিনী তা করবে।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাাস যোদ্ধাদের ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর হামাসকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।

আইডিএফের অভিযান শুরুর পর গত ২২ মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ৬০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের ৫৬ শতাংশই নারী, শিশু ও বেসাসমরিক; আহত হয়েছেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ এবং পুরো গাজা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।

কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে গাজায় অভিযান শুরু করেছিল আইডিএফ, তা পূরণ হয়নি। হামাস এখনও নির্মূল হয়নি।

ফলে সরকারের সঙ্গে আইডিএফের দূরত্ব বাড়ছে। বিভিন্ন ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিনের পর দিন ধরে গাজায় অভিযানরত আইডিএফের অনেক কর্মকর্তা এবং সেনা সদস্য মানসিক অবসাদের ভুগছেন। তাদের মধ্যে অনেকে আত্মহত্যাও করেছেন। গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ জানিয়েছে, গাজায় অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছেন ৫৮ হাজার সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য।

এর মধ্যে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয় যে হামাসকে পরিপূর্ণভাবে ধ্বংসের জন্য গাজা উপত্যকা পুরোপুরি ইসরায়েলের দখলে আনা জরুরি। সেনাবাহিনীকে সেই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানানোও হয়। তারপর থেকে সেনাবাহিনী ও মন্ত্রিসভার মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বাড়ে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন আইডিএফের অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা। সেখানে তারা গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে চাপ দিতে অনুরোধ করেছেন ট্রাম্পকে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর ওভাল অফিসসূত্রে জানা গেছে চিঠিটিতে ২০০ সাবেক আইডিএফ কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেছেন।

এই পরিস্থিতিতে গত ৫ আগস্ট সোমবার ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ায়েল জামিরকে নিজ দপ্তরে ডেকে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য পুরো গাজা দখলে আনা। এজন্য গাজার সর্বত্র আমাদের অভিযান চালাতে হবে। এমনকি হামাস যেসব অঞ্চলে ইসরায়েলি জিম্মিদের লুকিয়ে রেখেছে বলে আমরা সন্দেহ করছি, সেসব অঞ্চলেও চালাতে হবে অভিযান। আমাদের এই লক্ষ্য যদি আপনার পছন্দ হয়— তাহলে দায়িত্ব পালন করুন, নয়তো ইস্তফা দিন।”

প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যেই এক্সে এই বার্তা দিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

সূত্র : এএফপি

এসএমডব্লিউ