ন্যাটো মহাসচিব জিন্স স্টলটেনবার্গ

চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক প্রভাবকে বিশ্বের জন্য ‘নতুন পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে এক হওয়ার ডাক দিয়েছে সামরিক জোট ন্যাটো। ন্যাটোর বার্ষিক সম্মেলন শুরুর প্রাক্কালে সোমবার জোটটির মহাসচিব জিন্স স্টলটেনবার্গ সাংবাদিকদের এই কথা বলেছেন।

সোমবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে ন্যাটো মহাসচিব জানান, সামরিক বাহিনীর সদস্য ও প্রযুক্তির দিক থেকে চীনের সামরিক বাহিনী দিন কে দিন ন্যাটোর সমকক্ষ হয়ে উঠছে। এটি অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে চীন ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রগুলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।

স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘চীনের সামরিক শক্তি বাড়ানো এবং দেশটির উচ্চাকাঙ্খা ও আগ্রাসী মনোভাব ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সামনে দিন কে দিন পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হচ্ছে। এটি যদি অব্যাহত থাকে, সেক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।’

‘আমরা চীনকে শত্রু মনে করি না। দেশটির সঙ্গে নতুন কোনো শীতল যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছেও আমাদের নেই। কিন্তু চীনের ক্ষমতাসীন সরকারের স্বচ্ছতার অভাব ও ভুয়া তথ্য, গুজব ছড়ানোর সংস্কৃতির প্রেক্ষিতে আমরা রীতিমত উদ্বিগ্ন।

‘এই কারণেই এই ইস্যুতে ন্যাটো সদস্যরাষ্ট্রগুলোর এক হওয়া প্রয়োজন। আমাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য ছাড়া এই বিপদ মোকাবিলা সম্ভব নয়।’

আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর উপকূলবর্তী ইউরোপ ও আমেরিকার ৩০ টি দেশের সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) গঠিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে। এই জোটের সদর দফতর ব্রাসেলসে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার পর গত ১১ জুন প্রথমবারের মতো ইউরোপ সফরে গিয়েছেন জো বাইডেন। সেখানে গিয়ে প্রথমে যুক্তরাজ্যের কর্নওয়ালে জি৭ সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। ওই সম্মেলন শেষে ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর বৈঠকে যোগ দিতে বর্তমানে ব্রাসেলসে আছেন বাইডেন। তার আগেই সোমবার ন্যাটো মহাসচিব ইঙ্গিত দিলেন, এবারের সম্মেলনে চীন মনযোগের কেন্দ্রে আছে ন্যাটোর।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই প্রথম ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন বাইডেন। জোটের জন্য এই সম্মেলন খুবই ‘গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত’ বলে বর্ণনা করেছেন স্টলটেনবার্গ।

বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ন্যাটো সম্মেলনের আলোচনায় প্রাধান্য পাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা, চীনকে মোকাবেলা এবং চীনের দ্রুত সামরিক উত্থানের রাশ টেনে ধরার বিষয়টি।

বর্তমানে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম নেতৃস্থানীয় দেশ চীন; একই সঙ্গে দেশটি ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণবাদীও। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চীনের রাজনীতি, সমাজ ও মানুষের দৈনন্দিন জীবনে।

বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে এই মুহূর্তে চীনের সামরিক বাহিনী সবচেয়ে বড়। এই বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বর্তমানে ২০ লাখ। সম্প্রতি আফ্রিকা মহাদেশে কিছু সামরিক তৎপরতা চালাচ্ছে চীন। সেখানে কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে দেশটির।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় থেকেই চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে তিক্ততা শুরু হয়। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্টের সময়ও তা অব্যাহত আছে। তবে চলমান বিশ্ব রাজনীতিতে চীন ইস্যুতে আপাতত রক্ষণাত্মক অবস্থানেই থাকতে চাইছে ন্যাটো।

সামরিক এই জোটটির অন্যতম সদস্যরাষ্ট্র ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কথায় তা স্পষ্ট। চীনের প্রসঙ্গে ন্যাটোর অবস্থান নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বরিস জনসন সম্প্রতি বলেছেন, ‘চীন প্রসঙ্গে ন্যাটোর অবস্থান নিয়ে যদি আমাকে প্রশ্ন করা হয়, আমি বলব- এই মুহূর্তে আমাদের এবং ন্যাটোর কোনো সদস্যরাষ্ট্রেরই দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছে নেই।’

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ