করোনা মহামারির মধ্যেই ভারতে নতুন আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস

শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন এক নারী। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত বলে জানায় চিকিৎসকরা। ওই নারীকে ভর্তিও করা হয় হাসপাতালে। তবে এরপরই সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছেন হাসপাতাল থেকে। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ওই নারীর পালিয়ে যাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। তার খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ৫০ বছর বয়সী ওই নারী মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। গত কয়েকদিন আগে নানা শারীরিক উপসর্গ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওই নারী ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত বলে জানা যায়। সেকথা জানানো হয় তাকে।

সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল জানিয়েছে, শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের কথা শুনে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন রোগী। কিছুক্ষণ পর নার্সরা তার খোঁজ নিতে আসেন। দেখেন নির্দিষ্ট বেডে নেই ওই নারী। খোঁজ নেওয়া হলেও হাসপাতালের কোথাও পাওয়া যায়নি তাকে। পরে রোগীর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানানো হয় পুলিশকে।

এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমাদের মেডিকেল কলেজ থেকে মিউকরমাইকোসিসে সংক্রমিত এক নারী উধাও হয়ে গেছেন। বিষয়টি ইতোমধ্যেই পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ ওই নারীকে খুঁজছে।’

সাধারণত করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হযে ওঠা রোগীদের শরীরেই থাবা বসাচ্ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে এই ধরনের ছত্রাক শরীরে সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তদের চোখের সমস্যা, নাকের সমস্যার মতো একাধিক উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।

সঠিক সময়ে এই ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ ধরা না পড়লে ভয়ংকর আকার নিতে পারে। হতে পারে প্রাণহানিও। ব্ল্যাকের পাশাপাশি হোয়াইট, ইয়েলো এবং গ্রিন ফাঙ্গাসেরও দেখা মিলেছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা এক ব্যক্তির শরীরে মিলেছে গ্রিন ফাঙ্গাসের সন্ধান।

উল্লেখ্য, এর আগে ভারতের একাধিক রাজ্যে করোনা রোগীদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার ফলে সংক্রমণ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কাও তৈরি হয়। সেই ঘটনার পর এবার শিরোনামে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগীর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা। যা রীতিমতো আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গগুলো কী কী? পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, চোখ ও নাকে ব্যথা, লাল হয়ে যাওয়া, জ্বর, কাশি, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, রক্তবমি, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি হতে পারে মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ।

গাইডলাইনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, করোনা আক্রান্ত এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপসর্গগুলো হলো- সাইনাস, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে কালচে পানি অথবা রক্ত বের হওয়া, থুতনিতে অথবা মুখের যেকোনো একপাশে ব্যথা, দাঁতে ব্যথা, দাঁত পড়ে যাওয়া, চোয়ালে ও চোখে ব্যথা, এক জিনিস দু’টি দেখা।

এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ব্যবহার, বেশিদিন আইসিইউ-তে থাকলে কোমর্বিডিটি বা অন্যান্য অসুস্থতা থাকলেও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস।

টিএম